নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত কুর আন-সুন্নাহের আলোকে
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আজকে আমরা নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করব। আপনার মনে যদি নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন জেগে থাকে তাহলে আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত সময় মত আদায় করা ঈমানের পরে মুমিন নর ও নারীর উপরে সবচেয়ে বড় ফরজ ইবাদত । সালাত অর্থ প্রার্থনা । সালাত অর্থ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর শিখানো নির্ধারিত পদ্ধতিতে রুকুর সিজদার মাধ্যমে আল্লাহর জিকুর দোয়া করা ইসলামের পরিভাষায় এটাই সালাত ।
ভূমিকা
ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম . আর সালাত বা নামাজ হচ্ছে মনোনীত ধর্মের দ্বিতীয় স্তম্ভ .। নামাজ ছাড়া দিন পরিপূর্ণ হয় না যেমন খুঁটি ছাড়া ঘর হয় না । নামাজ পালন করা ফরজ প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ সবার জন্যই। আল্লাহর হুকুম নামাজ আদায় করা ।
নামাজের গুরুত্ব অত্যধিক ইসলামে। সে ব্যক্তি অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে যে নামাজের ফরজকে অস্বীকার করবে । প্রিয় নবী সাঃ এরশাদ করেছেন নামাজ বান্দা ও কুফরির মধ্যে পার্থক্য । সালাত শব্দটিকে ৮২ বার ব্যবহার করেছেন পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে নামাজের । যেমন ফরজ নামাজ নফল নামাজ ও ওয়াজিব নামাজ মুস্তাহাব নামাজ ইত্যাদি । আলাদা আলাদা ফজিলত রয়েছে এইসব নামাজের । জাহান্নামের কঠিন শাস্তি রয়েছে বেনামাজি ব্যাক্তির জন্য । সমাজ জীবনে বিভিন্ন ডিপ্রেশনে ভোগে বেনামাজি ব্যক্তিরা ।
ফজরের নামাজের ফজিলত এক রকম ভিতরের নামাজের ফজিলত আরেক রকম এবং তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত আরেক রকম ইত্যাদি । কিছু মৌলিক ফজিলত রয়েছে নামাজের । নিচে তা আলোচনা করা হবেঃ
হযরত আবু হুরাইয়া রাহমাতুল্লাহ থেকে বর্ণিত থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন মানুষ দশ রকমের উত্তম ফল লাভ করতে পারে নামাজ আদায়ের পর । পরকালে কবরে ও জীবদ্দশায় ।
- নামাজের প্রতিদান জীবদ্দশায়
১.নামাজী ব্যক্তির চেহারা উজ্জ্বল হয় জীবদ্দশায় ।
২.আলোক উদ্ভাসিত হয় নামাজী ব্যক্তির হৃদয় ।
৩.ক্লান্তি পূর্ণ এবং সুস্থ ও সফল হয় দেহ ।
২.আলোক উদ্ভাসিত হয় নামাজী ব্যক্তির হৃদয় ।
৩.ক্লান্তি পূর্ণ এবং সুস্থ ও সফল হয় দেহ ।
- নামাজের প্রতিদান কবরে
১.আল্লাহর দয়া অবতীর্ণ হতে থাকে কবরে নামাজী ব্যক্তির প্রতি ।
২.উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় কবরের সাথে বেহেস্তের পথ ।
৩.আলোকিত করা হয় নামাজী ব্যক্তির কবর ।
- নামাজের প্রতিদান পরকালে
১.আল্লাহর রহমতে সর্ব রকম শান্তি লাভ করবে নামাজী ব্যক্তি পরকালে ।
২.বেহেশতের নেয়ামত সমূহ প্রস্তুত করে রাখা হয় নামাজী ব্যক্তির জন্য ।
৩.বন্ধ করে দেওয়া হবে দোযখের দরজা ।
৪.জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে নামাজী ব্যক্তিকে ।
জীবনের রং পাল্টে যাবে নামাজ এমন একটি ইবাদত যার উপর আমল করলে । নামাজের উপর আমল করার তৌফিক দান করুন মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে । আমিন ।
সুন্নত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
সুন্নত নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে ফরজ নামাজের ঘাটতি থাকলে কেয়ামতের দিন এই নামাজ দ্বারা আল্লাহ সেই ঘাটতি পূরণ করবেন । নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন সবার আগে যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে তা হল নামাজ কেয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে ।
সে পরিত্রাণ ও সফলতা লাভ করবে নামাজ ঠিক হলে । ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে নামাজ ঠিক না হলে । আল্লাহতালা ফেরেশতাদের বলবেন ফরজ নামাজের কোন কমতি দেখা গেলে দেখো আমার বান্দার কোন নফল নামাজ আছে কিনা । ফরজ নামাজে ঘাটতি পূরণ করা হবে তখন নফল নামাজ দ্বারা ।
হিসাব গ্রহণ করা হবে তারপর অন্য আমলের । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ফরজের আগেও পরে সব সময় সুন্নত নামাজ আদায় করতেন বিশেষ কারণ ছাড়া তা আদায় করা থেকে বিরত থাকতেন না । এবং নির্দেশ দিতেন সাহাবায়ে কেরামদেরকেও ।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাঃ সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে যে নিয়ম নিষ্ঠুরভাবে দিনরাত ১২ রাকাত নফল নামাজ পড়বে । যেমন ফরজের আগে দুই রাকাত জোহর নামাজের আগে চার রাকাত পরে দুই রাকাত মাগরিবের পর দুই রাকাত এবং এশার পর দুই রাকাত ।
ফরজ নামাজের আগে পরে পড়া হয় যেসব সুন্নত তা দু প্রকার । প্রথম হলো সুন্নতের মুয়াক্কাদা দ্বিতীয় হল সুন্নতে গাইরে মোয়াকাদা । সুন্নতে মুয়াকাদা রাসুলুল্লাহ সাঃ নিয়মিত আমল করতেন এবং কখনো ছাড়তেন না ।
সুন্নতে গাইরেমকাদা বলা হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম নিয়মিত আমল করলেও মাঝে মাঝে ছেড়ে দিতেন । প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ এগুলোর উপর আমল করা
জামাতে নামাজের গুরুত্ব ফজিলত
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মুমিনের জীবনে ঈমানের পর আবশ্যকীয় একটি বিধান । বলে শেষ করা যাবে না এর কল্যাণ । জামাতে আদায় করা এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পদ্ধতিগত বিধান । শূন্যতে মোয়াকাদা পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী জামাতে আদায় করা যা ওয়াজিবের সঙ্গে তুলনীয়।
জামাতে শরিক না হওয়া বোধও নয় শরীয়ত অনুমোদিত কোন ওজর বা অপারগতা ছাড়া । জামাতে নামাজ আদায় করা তাগিদ দিয়ে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন সালাতের রুকুকারীদের সাথে রুকু কর । এক রাকাতে 27 রাকাতে সওয়াব লাভ হয় জামাতে নামাজ আদায় করলে ।
প্রতি কদমে নাকি লাভ হয় এবং গুনাহহ মাফ হয় জামাতে নামাজ আদায় করলে। মর্যাদা বৃদ্ধি হয় সঙ্গে একটি করে । জাহান্নাম ও মুনাফেকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় জামাতে নামাজ আদায় করলে । আনাস ইবনে মালিক রাহমাতুল্লাহ বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেছেন ।
প্রথম তাকবীরের সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করবে যে ব্যক্তি 40 দিন পর্যন্ত আল্লাহতালা তাকে দুটি পুরস্কার দান করবেন । এক মুক্তি দেবেন জাহান্নাম থেকে । দুই তার নাম কেটে দিবেন মুনাফিকের তালিকা থেকে ।
সারাদিন আল্লাহর হেফাজতে থাকা যায় জামাতে নামাজ আদায় করলে । নবীজি সাঃ এরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে সে আল্লাহর হেফাজতে থাকে । তাকে উপর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন আল্লাহর হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে যে কষ্ট দেবে ।
বেনামাজির পরিণতি
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যেমন পুরস্কার রয়েছে নামাজী ব্যক্তির জন্য ঠিক তেমনি ভাবে কঠোর শাস্তি রয়েছে বেনামাজির জন্য । শাস্তি ভোগ করতে হবে ইহজগতেও বেনামাজিকে । কোন বরকত থাকবে না বেনামাজির জীবিকা নির্বাহে। নেক লোকের কোন চিহ্ন থাকে না তার চেহারায় ।
আল্লাহর নিকট কবুল হয় না বেনামাজির দোয়া ও ইবাদত । আল্লাহর নিকট গ্রহণ হয় না তার জন্য কেউ দোয়া করলেও । অত্যন্ত অপমান এর সাথে বেনামাজির মৃত্যু হবে । কঠোর শাস্তি কবরে তাকে ভোগ করতে হবে । বহু অপমান করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে কেয়ামতের দিন বেনামাজিকে ।
কঠোর আযাবের সম্মুখীন হবে নামাজ বিনষ্টকারী এবং কুপ্রবর্তী অনুসরণ করেছে যারা । সমাজে অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা অফিস আদালতে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে নতুন পোশাক বা ভালো পোশাক পড়ে যান । কিন্তু নামাজের সময় পুরাতন পোশাক কম দামি এইগুলো পড়ে যান ।
একেবারেই ঠিক নয় এই কাজগুলো করা সর্বোত্তম পোশাকটি পরে সৃষ্টিকর্তার সামনে হাজির হওয়া উচিত ।
আমাদের শেষ কথা
নামাজের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি ঠিকমত নামাজ আদায় করে তার মাপ হয়ে যায় সমস্ত গুনাহ । খুলে যায় জান্নাতের দরজা গুলো । হারাম হয়ে যায় জাহান্নাম তার জন্য । আল্লাহতালা নামাজি ব্যক্তিকে পাঁচটি পুরস্কার দান করবেন ।
- রিজিকের অভাব দূর করে দেবেন ।
- মাফ করে দেবেন কবরের আজাব ।
- ডান হাতে দিবেন আমলনামা ।
- চোখের পলকে পার করে দেবেন পুল সিরাত ।
- জান্নাতে প্রবেশ করাবেন বিনা হিসাবে
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url