তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম আজকে আমরা তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনার মনে যদি তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কোনো জানার আগ্রহ থাকে তাহলে আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এ কথা প্রায় সবারই জানা তুলসী পাতার উপকারী । কিন্তু কোন উপকার গুলো পাওয়া যায় সে কথা অনেকেরই অজানা তুলসী পাতা খেলে । বেশ পুরনো ঔষধ হিসেবে তুলসী পাতার ব্যবহার ।
ভূমিকা
অতি পরিচিত একটি পাতা তুলসী পাতা । এই পাতা পাওয়া যায় খুব সহজে । সহজেই এই গাছ লাগানো যায় বাড়ির আশেপাশে কোন যত্ন ছাড়াই এই গাছ বেড়ে ওঠে । অনেক উপকারে আসে এই পাতা । এই পাতা অত্যন্ত গুণসম্পন্ন ঔষধি ও উপকারী ।
তুলসী পাতা
একটি ঔষধি পাতা তুলসী পাতা । নানা উপকারী গুণ রয়েছে এই পাতার । অনেক উপকারে আসে এই পাতা বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে । এই পাতা বিভিন্ন রোগ ও উপকারে লাগে ফুসফুসের রোগ , কাশি , সর্দি আর ও অনেক । এক ধরনের বীজ থাকে এই গাছের । সহজেই চারা পাওয়া যায় এর বীজ থেকে ।
আড়ও পড়ুনঃ হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
তুলসী পাতার উপকারিতা
আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি তুলসী পাতা খুব উপকারী একটি পাতা । এই পাতা কি কি উপকার করে তা জানব ।
- তুলসী পাতা সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খেলে খাবারের অরুচি দেখা দিলে তা সেরে যায় । বাড়বে মুখের রুচি এর পাতাতে ।
- মধুর সাথে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশি বা ঠান্ডা লাগলে তা ভালো হয়ে যায় ।
- এই পাতার রস জ্বর হলে খেতে পারেন । দ্রুত জ্বর কমে যাবে এতে।
- মুখের রোগ জীবাণু দূর হয় গরম পানিতে এই পাতা সেদ্ধ করে খেলে ।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং গলার জীবাণু ভালো হয় ।
- শারীরিক ক্লান্তি দূর এবং মানসিক অবসাদ দূর হয় এক কাপ চা তুলসী পাতা দিয়ে বানিয়ে খেলে ।
- তুলসী পাতার রস মাথা ব্যাথা হলেও খেতে পারেন । মাথাব্যথা কমবে এতে । এই পাতার রস কার্যকরী শরীরের ব্যথা হলেও ।
- চোখের সমস্যা দূর হয় পানিতে তুলসী পাতা ভিজিয়ে রেখে সেই পানি দিয়ে চোখ ধুলে । পাতা ভিজানো পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করুন চোখের সমস্যা থাকলে ।
- নিয়মিত এই পাতার রস খান বুকে কফ জমে গেলে । বুকে কফ বসা এতে দূর হবে । খেতে পারেন এই পাতার রস গলা ব্যথা হলে। গলা ব্যথা কমে যাবে এতে ।
- ভিটামিন সি , আন্টি -ইলফ্লেমটরি ও আন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে এই পাতার রসে । অনেক বেশি কার্যকর এই সকল উপাদান মানসিক চাপ কমাতে । নিয়মিত এর পাতা খান মানসিক চাপকমান ।
- বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে তুলসী পাতা খুবই কার্যকর যেমন-অ্যাজমা , ফুসফুসের সমস্যা , ব্রংকাইটিস , বিভিন্ন গবেষণা দের মতে ।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুবই কার্যকর তুলসী ও এলাচি দিয়ে ফুটানো পানি । এই পানি নিয়মিত পান করুন । এতে ক্ষমতা বাড়বে রোগ প্রতিরোধ এর ।
- তুলসী পাতার রয়েছে দারুন ভূমিকা রক্তের সুগার বা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে । সাহায্য করে রক্তের কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণ রাখতে ।
- এই পাতার দারুণ ভূমিকা রয়েছে হার্টের উপকারে । এই পাতা সাহায্য করে হৃদরোগ বা হার্টর অ্যাটাক প্রতিরোধে ।
- পানিতে তুলসী পাতা ফুটিয়ে পানি পান করলে পেট ব্যাথা সমস্যা দূর হয় । পেট ব্যথা কমে যাবে এতে ।
তুলসী পাতা ব্যবহারের নিয়ম
অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে তুলসী পাতার । আমরা জেনে গেছি এ সকল উপকারিতা । কিন্তু পাতা ব্যবহার করবো কিভাবে? আসুন জেনে নেই ।
- মধু কিংবা আদা দিয়ে খেতে পারেন তুলসীপাতা ।
- এই পাতা খেতে পারেন কাঁচা চিবিয়ে ।
- এই পাতা পানিতে ফুটিয়ে কুসুম গরম পানি খেতে পারেন ।
- টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায় গরম পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে এর পাতা ।
- ব্রুনের সমস্যা দূর হয় ফুটন্ত পানিতে তুলসী পাতা দিয়ে সেই পানির ভাব নিলে ।
- তুলসী পাতার রস ও বেসন কাঁচা হলুদের পেস্ট মিশ্রণ করে মুখে দিতে পারেন ।
তুলসী পাতার গুড়া ব্যবহারের নিয়ম
গুড়া করেও ব্যবহার করা যায় তুলসী পাতা । কিনতে পাওয়া যায় বাজারে এই গুড়া । বাসায়ও বানিয়ে নিতে পারেন মন চাইলে । বিশেষ কোনো নিয়ম নেই এই গুড়া ব্যবহারের । এই গুড়া খেতে পারেন কুসুম গরম পানিতে গুলে অথবা চায়ের সাথে মিশিয়ে । খেতে পারেন আবার মধুর সাথে মিশেও । এই গুড়া পেস্ট বানিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন ।
তুলসী পাতার অপকারিতা
উপকারী তুলসী পাতা কিন্তু ক্ষতিকরও হতে পারে অতিরিক্ত ব্যবহার করলে । ক্ষতিকর দিকগুলো জেনে নিই ।
- নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে অতিরিক্ত তুলসী পাতা ।
- অতিরিক্ত এই পাতা খেলে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে গর্ভাবস্থায় ।
- রক্ত জমাট বাঁধা বন্ধ হয়ে যেতে পারে অতিরিক্ত পরিমাণেই পাতা খেলে । হলে কোথাও কেটে গেলে বা অপারেশন করলে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে যা ক্ষতির কারণ ।
- পটাশিয়াম এই পাতায় যুক্ত হওয়ায় এটি বেশি খেলে রক্তচাপ একদম কমে যেতে পারে ।
তুলসী গাছের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য
- পাতাঃ সবুজ ডিম্বাকার আকৃতির ও সামান্য দানাদার তুলসি গাছের পাতা । অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত একটি মসলাদার ঘ্রান তীব্র রয়েছে ।
- কান্ডঃ পাতলা ও খাড়া তুলসী গাছের কান্ড
- ফলঃ ছোট বেগুনি ফুল ফোটে তুলসী গাছে । উষ্ণ , মিষ্টি এবং সামান্য তিক্ত তুলসী ।
- ধর্মীয় তাৎপর্যঃ পবিত্র উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচনা করে হিন্দু ধর্মের লোকেরা । মন্দিরে বা উঠানে রোপন করে তুলসী গাছ । তারা বিশ্বাস করে নিরাময় ক্ষমতা বা আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করে ।
- চাষঃ বাইরে ও বাড়ির ভিতরে চাষ করা যায় ।তুলসী জন্মানো সহজ । নিয়ত তানি দেওয়া প্রয়োজন আর্দ্র ও উষ্ণ অবস্থা পছন্দ করে । সভা ময়উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় প্রায় সব বাগানে , একই জন্মায় ঔষধি গাছ হিসেবে ।
- জাতঃ রাম তুলসী , ধালা তুলসী , কৃষ্ণ তুলসী এছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রকার হয়েছে । শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও ঔষধি বৈশিষ্ট্য আলাদা রয়েছে কিছুটা ।
- জলবায়ুঃ গ্রীষ্মকালে এবং উষ্ণ আবহাওয়ায় পছন্দ করে ।২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সর্বোত্তম ও উচ্চ আদ্রতা বেশি সেসব এলাকায় জন্মায় ।
- বংশ বিস্তারঃ বংশবিস্তার করা যায় তুলসী বীজ বা কাটিং থেকে । বীজ বাড়ির ভিতরে বা সরাসরি মাটিতে বোপন করা যায় । কাটিং নেওয়া যায় পরিপক্ক গাছ থেকে । শেখর দেওয়া যায় জল বা মাটিতে ।
লেখকের মন্তব্য
অনেক উপকারী হলেও এটি পরিমাণে পরিমিত খাওয়া উচিত তুলসী পাতা । ভিতের বিপরীত হতে পারে বেশি পরিমাণে খেলে । যেহেতু খুব সহজে ওষুধ গাছ জন্মায় তাই প্রত্যেকের উচিত তুলসী গাছ লাগানো । নানাবিধ উপকারে পাওয়া যায় এই গাছ থেকে । এতে আমাদেরই বেশি লাভ হবে ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url