শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনার মনে যদি শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
গ্রীষ্ম প্রধান দেশে শিশুর ডেঙ্গু জ্বর অত্যন্ত একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। সবচেয়ে বেশি শিশুর ডেঙ্গু দেখা যায় যেসব দেশে সেগুলো হল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ ল্যাটিন আমেরিকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, এবং আফ্রিকায়। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি থাকে।
ভূমিকা
একবিংশ শতাব্দীর যান্ত্রিক সভ্যতা যে সমস্ত ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে তার অন্যতম হলো পরিবেশ দূষণ। পরিবেশ দূষণের কারণেই আজ আমাদের নোংরা পরিবেশে জন্ম নিয়েছে এক ভয়াবহ রোগের জীবাণু বহনকারী ক্ষুদ্র পতঙ্গ এডিস মশা। এ মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় শিশু।
বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের আবির্ভাবের কারণে সারা দেশের মানুষ আজ চিন্তা গ্রস্থ। তাই আমাদের চারপাশের পরিবেশকে কিভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে এডিস মশার হাত হতে রক্ষা পেতে পারি তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
শিশুর ডেঙ্গু জ্বর
ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাস ঘটিত সংক্রামক ব্যাধি। মানব দেহে ডেঙ্গু ভাইরাসের আক্রমণ জনিত ক্লাসিক্যাল বা হেমোরজিক ধরনের তীব্র জ্বরের নামই ডেঙ্গু জ্বর। এ রোগের বাহক হল এডিস নামক এক ধরনের বিশেষ মশা। তবে এ রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ করতে সচেতনতাই প্রধান অবলম্বন। এক্ষেত্রে এডিস মশা সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন।
এডিস মশার পরিচয়
এডিস মশা দেখতে গার নিলাম কালো রঙ্গের। এ মশার সারা শরীরে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ আছে, পা গুলো একটু লম্বাটে ধরনে। এডিস এজিইপ টাই এবং এডিস এলপিটাস নামক এই দুই প্রজাতির স্ত্রী মশা ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস বহন করে থাকে। এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। বিশেষ করে সকাল বেলার প্রথম দিকে ও বিকেল বেলার শেষ দিকে এ মশা বেশি কামড়ায়।
এডিস মশা মানুষের তৈরি মাটির ও চিনামাটির পাত্র পড়ে থাকা টায়ার চিপস এর প্যাকেট প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদিতে ডিম পাড়ে এবং বংশ বৃদ্ধি করে। ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস বাহি এ মশা জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকি।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রকারভেদ
শিশুর ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশা বাহিত এক ধরনের আরএন এফ্ল্যাবি ভাইরাস জনিত তীব্র জ্বর। শিশুর ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত দু ধরনের হয়ে থাকে। যথা ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর ও হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি শেরও টাইপ রয়েছে।
আড়ও পড়ুন ঃ জ্বর হলে দ্রুত সুস্থ হওয়ার উপায়গুলো জানুন
এগুলো হচ্ছে den ১ . ডিইএন ২. ডি ই এন ৩. ডি ই এন ৪. এই চারটি সেরা টাইপ থেকে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। তবে এগুলোর মধ্যে মারাত্মক ডিইএন ২, ডি ই এন ৩। এ দুটি শেরও টাইপের ডেঙ্গু ভাইরাসই হেমো রিজিক ডেঙ্গু জ্বরের কারণ।
ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ
ক্লাসিকাল ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে যে সকল উপসর্গ দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে তীব্র জ্বর( সাধারণ জ্বর ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে)। বমি পেট ব্যাথা মাথাব্যাথা কোমর ব্যাথা জয়েন্ট ব্যাথা চোখের পিছনে ব্যাথা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে হাড় ব্যাথা এতটাই প্রচন্ড হয় যে মনে হয় হাড় ভেঙ্গে গেছে। এ কারণে জ্বরকে ব্রেক বোন ফিভার বলা হয়ে থাকে।
অনেক সময় শরীরের ত্বকে এলার্জি রাশের মত রাস দেখা দিতে পারে। এগুলো কখনো কখনো চুলকানির উদ্যক করে থাকে। হেমরিজিক বা রক্তক্ষরা ডেঙ্গু জ্বর খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো এক্ষেত্রে আরো তীব্র হয়ে দেখা দেয় এবং সঙ্গে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। বিশেষ করে মারি নাক দিয়ে রক্তপাত।
ত্বকের নিচে জমাট বাঁধা রক্তের নমুনা রক্তভূমি পায়খানার সাথে কালো রক্ত যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিয়ে থাকে। রক্তক্ষরণের ফলে হাইপোভালিউমিক সকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই অবস্থাকে বলা হয় ডেঙ্গু শাক সিঙ্গডম।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা পদ্ধতি
ডেঙ্গু জ্বরের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ক্লাসিকাল এবং রক্তক্ষরণ হেমোরেজিক ডেঙ্গু যার উভয় ক্ষেত্রে চিকিৎসা উপসর্গ অনুযায়ী করতে হবে। ক্লাসিকাল ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হয় ব্যাথার জন্য প্যারাসিটামল বমির জন্য স্টিমেটিল জাতীয় ঔষধ দেওয়া হয়।
ডেঙ্গু জ্বরে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হয়। হেমো রিজিক ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। প্রতিদিন রোগীর রক্তের প্লেটলেট কাউন্ট এবং pcv পরীক্ষা করাতে হবে। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরে রোগীর প্লেটলেট কাউন্ট কমে যেতে পারে।প্লেটলেট কাউন্ট দশ হাজারের নিচে নেমে গেলে রোগীর শিরা পথেপ্লেটলেট ট্রান্সফিউশন করতে হবে।
আর রোগীর যদি প্রত্যক্ষ রক্তক্ষরণ হয় রোগীকে রক্ত দিতে হবে। রক্ত জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ব্যাথার জন্য এসপিরিন জাতীয় ঔষধ দেওয়া যাবে না। কারণ এতে রক্তক্ষরণের প্রবণতা বেড়ে যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার
শিশুর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে আমাদের প্রধান করণীয় হল চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এজন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে
- এডিস মশার ডেঙ্গু জ্বরের বাহক তাই বাহক মশার দমন ই হলো ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের প্রধান উপায়।
- বাস গৃহ ফুলের টপ অব্যবহিত কোটা, ডাম, নারিকেলের মালা গাড়ির টায়ার ইত্যাদিতে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এসব পানি জমার স্থান ধ্বংস করতে হবে।
- ঘরে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
- দিনের বেলায় কামড়ায় এডিস মশা তাই দিনের বেলা ঘুমানোর সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমান।
- ডেঙ্গুর সন্দেহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শেষ কথা
ডেঙ্গু জ্বরের কালো থাবা ছিনিয়ে নিয়েছে অনেক জীবন। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সফলতার যুগে কারো কাম্য নয়। তবুও রোগ আসে নিয়ে যায় জীবন। তাই ডেঙ্গু জ্বরের কারণে আর কোন অমূল্য জীবন যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। বস্তুত কার্যকর ও টেকসই নিরাপদ ব্যবস্থার জন্য ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সর্বস্তরে জনগণের সম্প্রীতি প্রত্যাবর্ষক।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url