জ্বর হলে দ্রুত সুস্থ হওয়ার উপায়গুলো জানুন
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জ্বর হলে দ্রুত সুস্থ হওয়ার উপায়গুলো জেনে নিন সে সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করব। আপনার মনে যদি জ্বর হলে দ্রুত সুস্থ হওয়ার উপায় গুলো জেনে নিন । সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন জেগে থাকে তাহলে আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জ্বর হলে দ্রুত সুস্থ হওয়ার উপায় গুলো জেনে নিন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কমবেশি সবারই রয়েছে হঠাৎ করে জ্বর হওয়ার অভিজ্ঞতা । অনেককে দীর্ঘদিন জড়িয়ে ভুগতে হয় আবার অনেকের জ্বর দুই বা তিন দিন পরে ভালো হয়ে যায় । কারো কারো আবার জ্বরের কারণে হাসপাতালে ভর্তির অভিজ্ঞতা ও রয়েছে ।
ভূমিকা
প্রবণতা বেশি দেখা যায় বাংলাদেশে সাধারণত জ্বর হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেয়ে ঘরে চিকিৎসা নেওয়া । কোন কোন সময় জ্বর মারাত্ম ক প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে চিকিৎসকরা বলেছেন । ঝরে অনেক প্রকারভেদ রয়েছে চিকিৎসকদের মতে । এমনিতেই সেরে যায় কিছু কিছু জ্বর । আবার দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত কিছু কিছু জ্বরের ক্ষেত্রে । এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার জীবনে কখনো জ্বরে ভোগেন নি ।
আড়ও পড়ুনঃ আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা জেনে নিন
কারণ জ্বর হচ্ছে অসুস্থ হওয়ার একটি অন্যতম উপসর্গ । বিভিন্ন ডাক্তারদের মতে জ্বর আসলে কোন রোগ নয় । অন্য কোন রোগের লক্ষণ মাত্র এটি ।্জ্বর হতে পারে শরীরের কোন জীবাণুর সংক্রমণ হলে । জ্বরে ভোগে মানুষ ব্যাকটেরিয়া , ভাইরাস ইত্যাদির আক্রমণে । আসলে অবহেলা করা উচিত নয় কোন জ্বর কেই । ব্যবস্থা নেওয়া উচিত উপসর্গ বুঝে ।
জ্বর কি?
জ্বর বলা হয় শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে শুরু করলে বা উচ্চ তাপমাত্রা কে । চিকিৎসকরা বলেন জ্বর রোগের একটি লক্ষণ বা উপসর্গ এটি আসলে কোন রোগ নয় । শরীরের ভেতরের কোন রোগের আলামত বলা যেতে পারে জ্বর হওয়াকে । বিভিন্ন সময় গুরুতর রোগের উপসর্গ হিসেবে জ্বর আসতে পারে তাছাড়াও সর্দি কাশির মত হয়ে জ্বর আসতে পারে ।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে লড়াই করতে শুরু করে শরীরের ভেতরে কোন জীবাণু আক্রমণ করে সেটা শেখাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিভিন্ন কোষ থেকে নিঃসরণ করে পাইরোজেন নামক এক ধরনের পদার্থ । জ্বরের অনুভূতি হয় এ কারণে । ৯৮,৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শরীরের তাপমাত্রা এর বেশি হলে জ্বর বলা হয়ে থাকে তখন ।
কেন হয় জ্বর?
বিভিন্ন চিকিৎসকরা বলেছেন জ্বর হতে পারে অনেকগুলো কারণে । ঠান্ডা লেগে জ্বর হওয়া বা সর্দি কাশির কারণে জ্বর সবচেয়ে সাধারণ । ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের আক্রমণ হলে অর্থাৎ ইনফেকশন হলে জ্বর হতে পারে শরীরের ভেতরে । জ্বর হতে পারে প্রোটোজোয়া বা ফাঙ্গাস ইনফেকশনের কারণেও । তাছাড়া জ্বর হতে পারে যেকোনো ধরনের ম্যালি গনেন্সি বা ক্যান্সারের কারণেও ।
এছাড়াও বিভিন্ন কারণে জ্বর হতে পারে যেমনঃ টিকা নিলে , হঠাৎ করে কোনো কারণে ভয় পেলে , মানসিকভাবে আঘাত পেলে , প্রস্রাবে রাস্তা ইনফেকশন হলে , টিউমার হলে , পিরিয়ডের কারণে জ্বর হতে পারে । জ্বরের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে ম্যালেরিয়া , করোনাভাইরাস , টাইফয়েড , ডেঙ্গু ইত্যাদি ।
কি করবেন জ্বর হলে?
নিজের সিদ্ধান্তে ওষধ খেয়ে নেন জ্বর এলে অনেকেই । উচিত নয় যা একদমই । তরল খাবার খাওয়া জ্বরের সময় প্রধান চিকিৎসা । অফিসে থাকা অবস্থায় যদি আপনি জ্বর আসছে বুঝলেই বেশ খানিকটা পানি খান কিছুক্ষণ পরপর । একটু গরম ছুট খেয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন । একই কাজ করবেন বাড়িতে থাকলেও । এর সাথে আদা চা খান । অনেকটা কমে যাবে গলা ব্যথা বা মাথা ধরা থাকলে ।
প্রকারভেদে জ্বর
জ্বরকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় । কন্টি নিউডঃ যদি কেউ জ্বরে আক্রান্ত হয় ২৪ ঘন্টায় শরীরের তাপমাত্রা যখন এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ১.৫ ফারেনহাইট তত্ত্ব হয় পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় জ্বর আসে না তখন সেটাকে বলা হয় কন্টিনিউড জ্বর ।
রেমিটেন্টঃ আবার যদি কারো 24 ঘন্টায় জ্বরের মাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩ ফারেনহাইট এর মধ্যে তারতম্য হয় , তখন সেটাকে রেমিটেন্ট জ্বর বলে ।
ইন্টার মিটেন্টঃ দৈনিক শরীরে যখন কয়েক ঘন্টা করে জ্বর থাকে তখন তাকে ইন্টার মিটেন্ট জ্বর হিসেবে ধরা হয় ।
কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে জ্বর হলে?
অনেক চিকিৎসকরা বলেছেন রোগী নিজেই বুঝতে পারেন অনেক সময় জ্বরের কারণ । যেমনঃ ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি-কাশির সঙ্গে জ্বর , বৃষ্টিতে ভেজার কারণে জ্বর থাকলে সেটা কয়েকদিন পরেই ভালো হয়ে যায় । সর্দি কাশি এবং ঠান্ডা জনিত সাধারণ জাত থাকে । উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই এরকম জ্বরে । কিছু আলাদা উপসর্গ দেখা যায় কিন্তু কোন কোন জ্বরের ।
কোন রোগের প্রসাবে জ্বালাপোড়া হচ্ছে বা ঘন ঘন প্রস্রাব হচ্ছে , ব্যাথা হচ্ছে পিঠের নিচের দিকে ধারণা করতে পারি তখন আমরা তার কিডনি বা প্রস্রাবের নালীতে হয়তো সংক্রমণ হয়েছে । এখন ডেঙ্গুর মৌসুম ডেঙ্গুর আশংকা থাকে কারো যদি প্রচন্ড জ্বর থাকে , পেছনে সরাসরি ব্যথা বা চোখ লাল হয় । জ্বরের চিকিৎসা করতে হয় এরকম অনেক উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকরা বলেছেন ।
তখন সেটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে আপাত দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়াই যদি কারো জ্বর হয় । গুরুতর কোন রোগের উপসর্গ হতে পারে কারণ সেটা । দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত অনেকদিন একটানা জ্বর থাকলে অথবা শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি থাকলে । চিকিৎসকরা তখন অন্যান্য লক্ষণ যাচাই করে জ্বরের কারণ নির্ধারণ করে ব্যবস্থা নেবেন সেই অনুযায়ী বিভিন্ন ডাক্তাররা বলেছেন ।
বিভিন্ন চিকিৎসকরা বলেছেন ডেঙ্গুর মতো রোগের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা করা উচিত কারণ এই রোগের রক্তের প্লাটিলেট কমে যায় । দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে আক্রান্ত হওয়া তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে । জ্বরের কারণ বের করেন ক্যান্সার বা টিউমারের মত সমস্যায় চিকিৎসকরা বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ।
দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে জ্বরের সাথে যদি ঘাড় বা শরীরে ব্যথা , বমি করা , উচ্চ তাপমাত্রা ,খাবার খেতে না পারা রাত্রে জ্বর আসা , তিন দিনের বেশি জ্বর থাকা , চোখ শুকিয়ে যাওয়া খিঁচুনি হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে ।
নিজে নিজে ঔষধ খাওয়া?
বিভিন্ন চিকিৎসকরা বলেছেন বাংলাদেশ একটা নিয়মিত প্রবণতা যে জ্বর হলে নিজে নিজে প্যারাসিটামল বা অ্যান্টিবায়োটিক ক জাতীয় ঔষধ কিনে খেতে শুরু করেন অনেকেই । চিকিৎসকরা খাওয়ার পরামর্শ দেন জ্বরের প্রাথমিক এ প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ অনেক সময় । চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয় অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ কোনক্রমেই ।
এন্টিবায়োটিক দরকার হয় না অনেকের ক্ষেত্রে । শরীরে প্রতিরোধী ব্যবস্থা তৈরি হয় নিজে নিজে নিয়ম না মেনে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া হলে । সেটা আর কাজ করে না পরবর্তীতে চিকিৎসক এ ধরনের ওষুধ দিলেও । অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত তিন দিনের বেশি থাকলে বাজারে সঙ্গে সঙ্গে অন্য কোন উপসর্গ থাকলে ।
শুধুমাত্র রাতের বেলায় জ্বর আসতে পারে অনেক সময় টিবি বা লিম্ফোমার জন্য । জ্বরের কারণ নির্ধারণের চেষ্টা করেন চিকিৎসা করা সাধারণত সিবিসি , টাইফয়েড , ম্যালেরিয়া , ডেঙ্গু , প্রস্রাব ইত্যাদি পরীক্ষা করে । এক্সরে বা সিটিস্ক্যান এর মত পরীক্ষা করা হয় ক্যান্সার বা টিউমারের আশঙ্কা থাকলে ।
জ্বর জ্বর ভাব কেন হয় তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও?
অনেক চিকিৎসা করা বলেন অনেক রোগীরা তাদের জ্বর জ্বর ভাব লাগে কিন্তু থার্মোমিটারে মাপলে জ্বর দেখায় না । ফিডারিস ফিলিং বলে থাকেন এ ধরনের রোগ কে । সেটা হতে পারে উদ্বেগ বা অতিরিক্ত চিন্তার কারনে । শুধুমাত্র মানসিক কারণে হতে পারে আবার অনেক সময় । রক্তশূন্যতা বা অন্য কোন রোগ আছে কিনা এ ধরনের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা করে দেখেন ।
গোসল করা বা মাথায় পানি দেওয়া
চিকিৎসকরা বলেছেন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসবে না শুধু মাথায় পানি দিলে । সারা শরীর সাধারণত ভেজা কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দিতে বলা হয় জ্বর হলে । কারণ মাথা খুব ছোট একটি অংশ সারা সারা শরীরের মধ্যে । ফলে উপকার পাওয়া যাবে না শুধু মাথায় পানি দিলে ।
শরীরের সব জায়গা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে ভেজা কাপড় দিয়ে ভালো হবে বিভিন্ন চিকিৎসকেরা বলেছেন । গোসল করলে কোন ক্ষতি হয় না সংগ্রহ বলে ঝুঁকি না থাকলে । বরং রোগীদের গোসল করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা অনেক সময় উচ্চ তাপমাত্রা থাকলে ।
কিছু পরামর্শ জ্বরের জন্য
বিশ্রামে থাকাঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা লড়াই করতে শুরু করে জ্বর হলে শরীরের ভেতরে থাকা জীবাণুর বিরুদ্ধে । পরিপূর্ণ বিশ্রাম দেওয়া উচিত এ সময় শরীরকে । প্রচুর তরল পানীয় পান করাঃ শরীরের পানি শূন্যতা রোধ করা যায় প্রচুর পরিমাণে তরল পানি বা ফলের রস পানের মাধ্যমে । গরম পানি বা লেবুর পানি পান করা যেতে পারে বিশেষ করে ।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণঃ ফলমূল বা পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত জ্বরের সময় তৈরি হলেও। রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার মত শক্তি সরবরাহ পায় তাহলে শরীর । উষ্ণ পরিবেশে থাকাঃ জ্বর হলে থাকতে হবে শুষ্ক ও উষ্ণ পরিবেশে । এ সময় উচিত পরিষ্কার ও উষ্ণ পোশাক পরা ।
লেখকের মন্তব্য
সারাক্ষণ শুয়ে থাকবেন না জ্বর হলে । এতে করে জ্বর বেড়ে যায় । রোদের মধ্যে গিয়ে খানিকটা বসুন এবং হাটাহাটি করুন সম্ভব হলে । একটু ছায়া জায়গা দেখে বসুন রোদে বসা সম্ভব না হলে । গা মেজ মেজ করা ভাবটা কমবে এতে করে । অনেকটা উপকার পাবেন পানি গরম করে তার মধ্যে লেবুর রস আদা কুচি মিশিয়ে খেলে । ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্যা দূর হবে এবং জ্বরও কমতে পারে এর ফলে ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url