জেনে নিন সজনে পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
এই পোস্টের এর মাধ্যমে আজ আমরা সজনে পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে
আলোচনা করব। সজনে পাতা খাওয়ার ফলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় । সজনে ডাটা বা পাতা একটি অতি পরিচিত
দামি সুস্বাদু সবজি । সজনের ইংরেজি নাম Drumstick এবং বৈজ্ঞানিক নাম Moringa
oleifera উৎপত্তিস্থল পাক ভারত উপমহাদেশ হলেও এ গাছ শীত প্রধান দেশ ব্যতীত সারা
পৃথিবীতেই জন্মে।
সজনে কাঁচা লম্বা ফল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, আর পাতা খাওয়া হয় শাক হিসেবে।
সজনে পাতা এবং ফল উভয়ের মধ্যেই বিপুল পরিমাণে পুষ্টি আছে। সজনে পাতায় নানা
গুনাগুন ও স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। লেবু থেকে সাত গুণ ভিটামিন সি সজিনা পাতায়
রয়েছে। যা আমাদের দেহের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
পোস্ট সূচিপত্রঃ সজনে পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম জানুনউপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম জানুন
এটির পাতা শাক হিসেবে ব্যবহৃত ভিটামিন এ এর এক বিশাল উৎস। সজনের ফল এবং পাতায়
অনেক পরিমানে পুষ্টি আছে। এতসব পুষ্টিগুণ একসাথে আছে বলেই এর মাধ্যমে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা পাওয়া যায় এবং জীবন ধারণের দুই রকমের পুষ্টি পাওয়া যায়। যখন
গোটা বিশ্ব করুণা মহামারীর আতঙ্কে কাপছে। বাদ নেই বাংলাদেশও।
এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত সচেতনতা বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি প্রয়োজন শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এ সময় খাবারের তালিকা পরিবর্তন করে পুষ্টিকর খাবার
কে প্রাধান্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে সজনে পাতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে সজনে পুষ্টি ও
বিভিন্ন খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ সবজি।
সজনে পাতার পুষ্টিগুণ
সজনে একটি অতি পরিচিত পুষ্টি ও খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ সবজি। সজনেতে প্রায় ৩০০ রোগের
প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। সজনে পাতায় অ্যামিনো এসিড থাকাই সজনেকে ডিনামাইট
বলা হয়। যা শরীরের প্রয়োজনের সব ভিটামিনের সাথে অত্যাবশকীয়। সজনের ফল খাওয়ার
পাশাপাশি সজনের পাতা পুষ্টি ঘাটতি পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সজনে পাতার বিশেষ
গুণাগুণ রয়েছে। গ্রাম বাংলার পরিচিতি একটি গাছ সজনে। একটি সিজেনাল সবজি হলেও
গাছের পাতা কিন্তু সারা বছরই পাওয়া যায়।
সজনে পাতায় অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। ৭গুণ ভিটামিন সি , দুই গুণ আমিষ, চার গুণ
ক্যালসিয়াম, গাজরের থেকে চার গুণ ভিটামিন এ, কলার থেকে তিনগুন পটাশিয়াম
পুষ্টিগুণ বেশি সজিনা পাতায় রয়েছে। ঠিক ঔষুধ হিসাবে কাজ করে সজনে পাতা কোলেস্টরেলের মাত্রা কমায়হৃদ রোগে আক্রান্ত রোগিদের ,ডায়াবেটিস কমিয়ে দেয়, উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ
ভূমিকা পালন করে থাকে।
সজনে পাতার গুড়ার উপকারিতা
আমাদের দেশে খুব কমন একটি খাবার হলো সজনে ডাটা যা আঞ্চলিক ভাষায় সাজনা নামেও
পরিচিত। সজনে ডাটা সবাই খেয়ে থাকলেও সজনে পাতা খাওয়ার বিষয়টি অনেকের কাছে
অপরিচিত মনে হতে পারে। তাই আজকের এই পোস্টে সজনে পাতা খাওয়ার পদ্ধতি এবং সজনে
পাতা কি কি উপকার বয়ে আনতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা করব। পরিণত বয়সী
বাংলাদেশীদের মধ্যে সজনে ডাটা বা সজনে পাতা খাননি, এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি
হবে না।
সজনে পাতাকে বলা হয় অলৌকিক পাতা। আজকে আমরা এই সময়ের একটি সুপার ফুড নিয়ে
আলোচনা করতে যাচ্ছি, যা এইসময়ের আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি গবেষণা , গবেষণা করে
পাওয়া গেছে সজনে পাতা। এশিয়ায় পূর্বে সজনে গাছ এবং আফ্রিকা মহাদেশের ভিন্ন ভিন্ন
অংশে পাওয়া যেত এবং সজনে গাছের উপকারিতা সম্পর্কে পরবর্তীকালে জানার পর সারা
বিশ্বে সজনে গাছ অধিক পরিমাণ চাষ হওয়া শুরু হয়েছে।
আমরা সজনে গাছের ডাটা এবং সজনে গাছের পাতা বা ড্রামাস্টিক কে খেয়ে থাকি। সজনে
পাতার গুড়াতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট থাকে এবং
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার
জন্য বিশেষ প্রয়োজন। এ কারণে সজনে পাতার উপকারিতা আমাদের শরীরের অনেক
প্রয়োজন।
সজনে পাতা নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরে ভিটামিন
মিনারেল এর অভাব হয় না। ১০০ গ্রাম সজনে পাতার পাউডারে প্রায় ৯ থেকে ১০ গ্রাম
প্রোটিন থাকে, যার মধ্যে নয় থেকে ১০ প্রকারের অ্যামাইনো এসিড বিদ্যমান থাকে। এর
থেকে আমরা বুঝতে পারি সজনে পাতাতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আর ভিটামিন সি থাকে যা
আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ প্রয়োজন।
সজনে পাতার গুড়া করার নিয়ম
সজনে পাতা গুড়া করার নিয়ম, সজনে পাতা গুড়া করে খাওয়ার নিয়ম আমাদের আজকের
আর্টিকেলটির মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জানানোর চেষ্টা করব তাহলে চলুন
তথ্যগুলো ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক। এক টেবিল চামচ শুকনা সজিনা পাতার গুড়া থেকে
১-২ বছর বয়সী শিশুদের অত্যবশ্যকীয় ১৪% আমিষ,২৩% লৌহ,৪০% ক্যালসিয়াম ও
ভিটামিনের সরবরাহ হয়ে থাকে।
গর্ভবতী বা স্তন্যদাত্রী মায়ের চাহিদার সবটুকু
ক্যালসিয়াম ও আয়রন সরবরাহ হওয়ার জন্য দৈনিক সজনে ৬ চামুচ পাতার গুড়া খাওয়ার
ফলে।
সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম
কচি সজনে পাতার রস নিয়মিত খেলে রক্তের উচ্চ চাপ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। সজনে পাতার বড়া, সালাদ, পাতা বাটা ও সজিনা পাতার পাউডার দ্বারা খাদ্য সুস্বাদু ও
শক্তিবর্ধক হয়। খাদ্যের মান বাড়ানোর জন্য যেকোনো সুপের সাথে শুকনা সজিনা পাতার
পাউডার মেশালে ভালো হয়। কফি বা চা তৈরিতে সজিনা পাতার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।
ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা
যদি আপনি ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরেও
সমাধান পাননি, তাহলে আজ আমরা আপনাকে একটি অলৌকিক জিনিস সম্পর্কে বলবো। এই অলৌকিক
জিনিসটি নানা উপায়ে গ্রহণ করলে আপনার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এই
অলৌকিক জিনিসটি হচ্ছে সজনে পাতা। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন চিকিৎসায় সজনে গাছের পাতা,
ফুল, বীজ এবং শিকড় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সজনে গাছের সবকিছুই স্বাস্থ্যের জন্য খুবই
উপকারী।
দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, এবং ছত্রাক
সংক্রমণ, বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা, এমনকি ক্যান্সার প্রতিরোধে সজনে ডাটা কার্যকারী
ভূমিকা রাখে। সজনে পাতাতে আছে আন্টি-ইনফ্লামেটরি এবং আন্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে । সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে
অ্যাসকরিক অ্যাসিড থাকার ফলে যা শরীরের ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়ায়, ফলে কমে যায় রক্তের শর্করা।
আরও পড়ুনঃ ঘুমানোর আগে যে কাজগুলো করা সুন্নাত
সজনে পাতায় উপস্থিত বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা
নিয়ন্ত্রণ করে। এতে থাকা বিভিন্ন রকম প্রোটিন রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে
দেয়, তাই ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যাক্তিদের জন্য খুবই উপকারী। সজনে পাতা
পিত্তথলির কার্যকারিতা বাড়াতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ডায়াবেটিস
আক্রান্ত ছয় জনের মধ্যে সজনে পাতার গুড়া খাবারের সঙ্গে যোগ করলে রক্তে শর্করার
বৃদ্ধি ২১% কমে যায়।
ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা
ত্বক ও চুলের যত্নে সজনে পাতার গুড়ার উপকারিতা অনেক। এটি ত্বকের দাগ-ছোপ দূর
করে। পাশাপাশি রুক্ষ চুলে প্রাণ ফেরায় এবং লম্বা করে। শুধু শরীরের জন্য উপকারী
নয় সজনে পাতা। এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ত্বকের ভেতর থেকে সুস্থ রাখে। ঠোঁটের
যত্নে সজনে পাতার তেল ব্যবহার করতে পারেন। এ তেল আর্দ্রতা বজায় রাখে ঠোঁটের।
সজনের তেল ত্বকের দাগ-ছোপ, বলিরেখা, অন্যান্য সমস্যা দূর করার ফলে আমাদের ত্বক
উজ্জ্বল হয়।
আরও পড়ুনঃ ঘুমানোর আগে যে কাজগুলো করা সুন্নাত
এই তেলে আন্ট্রিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটা ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা দূর
হতে পারে। তবে ব্যবহারের আগে একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
সজনের তেল ত্বকের বিভিন্ন ছিদ্র বন্ধ করতে সাহায্য করে, এটা ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয়
কলিজেন প্রোটিন উৎপাদনে বিশেষভাবে সাহায্য করে এবং ত্বকের ছিদ্র বন্দ করে দেয়।
শেষ কথা
উপরে এই আর্টিকেলে আমরা সজনে পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা
করলাম। আলোচনা থেকে আমরা সজনে পাতার বিভিন্ন উপকার সম্পর্কে জানতে পারলাম। সজনে
পাতা আমাদের বিভিন্ন উপকারে আসে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সজনা পাতার
ভূমিকা অপরিসীম। এই আর্টিকেল পড়ার পরে যদি মনে করেন আপনাকে ভালো লেগেছে, তাহলে
আপনি আপনার আত্মীয় স্বজনের মাঝে শেয়ার করতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url