নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা কেমন আছেন নিশ্চয়ই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভালই আছি। আজকে আমরা এই আর্টিকেলে নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো । নিম বলতে আমরা বুঝি একটি গাছের নাম। নিম গাছ থেকে পাওয়া পাতা, ছাল ও বীজ ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। 
নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
নিম পাতার ঔষধি গুণাগুণ এর মধ্যে যে সকল রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে তা হলো নাক দিয়ে রক্ত পড়া, কুষ্ঠ রোগ, চোখের রোগ, ত্বকের সমস্যা, পেট খারাপ হওয়া, জ্বর, লিভারের সমস্যা, মাড়ির রোগ ও ডায়াবেটিস রোগের জন্য নিম পাতার ভূমিকা অপরিসীম। নিমপাতা শুধু উপকার করে তাই না এর অপকারিতাও রয়েছে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

ভূমিকাঃ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

নিমপাতা অনেকের কাছে মহাঔষধ নামে পরিচিত। ভাইরাস নির্মূল করার ক্ষেত্রে নিম পাতার রস অনেক কার্যকরী। আগের দিকে গ্রামঅঞ্চলে চিকেন পক্স, হাম, ও চর্মরোগ দেখা দিলে নিম পাতা ভালো করে পেস্ট করে লাগানো হতো। তাছাড়া নিমপাতা পানির সাথে ভালো করে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে ত্বকের চুলকানি ও জ্বালাপোড়া দূর হয়ে যায়। নিম পাতায় বিশেষ একটি উপাদান গ্যাডোনিন থাকায় ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে। আমরা এখন নিচে নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা-নিমপাতাকে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের আশীর্বাদের ঝুড়ি বলতে পারি। নিমপাতা নিয়ে আশ্চর্য হওয়ার কোন কারণ নেই, নিমপাতা একটি শক্তিশালী ইমিউনো-উত্তেজক হওয়ার পাশাপাশি এটি একটি এন্টিভাইরাল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নিম পাতার প্রাথমিক কাজ হল বাত ব্যাধি বা নিউরোমাসকুলার চিকিৎসা নিমপাতা দিয়ে হয়ে থাকে। এর মধ্যে নিম পাতার উপকারিতা গুলো হলো।
শরীরের রক্ত পরিশোধন করা, টক্সিন অপসারণ করা, শরীরের ফ্রি রেডিকেলের কারণে ক্ষতি প্রতিরোধ করা, পোকামাকড়ের কামড় দিলে এবং আলসারের চিকিৎসার জন্য নিম পাতার ব্যবহার করা। নিম পাতায় যেহেতু এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুনাগুন রয়েছে এটার জন্য যেকোনো সংক্রমণ, পোড়া এবং ত্বকের যেকোন সমস্যার জন্য ঔষধ হিসেবে কাজ করে। 

শরীরের নানা রকম সংক্রমণকে ধ্বংস করে ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে এবং দ্রুত নিরাময় করে ফেলে। নিম পাতা উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের আরো ভালোভাবে জানতে হবে।


নিম পাতার অপকারিতা-নিম পাতার উপকারিতা পাশাপাশি কিছু অপকারিতা রয়েছে। আমরা এখন নিম পাতার অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। একজন ভালো বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরামর্শ নিয়ে আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে নিমপাতা কতদিন একটানা খাওয়া উচিত। যদিও নিম পাতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তীব্র নয় তারপরও সতর্কতা অবলম্বন করে সেবন করা উচিত। বিশেষ করে খালি পেটে বেশিদিন খাওয়ার ফলে এতে বিপরীত হতে পারি। 

নিমপাতা খাওয়ার ফলে কারো যদি বমি বমি ভাব, মাথা ব্যাথা, ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা দেয় সঙ্গে সঙ্গে তা খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। নিমপাতা বেশি খাওয়ার ফলে বন্ধ্যাত্মার মত কারণ হতে পারে। তাই যারা সন্তান নিতে চাচ্ছেন তারা নিম পাতা থেকে দূরে থাকুন। যে সকল মহিলা গর্ভবতী তাদের জন্য নিম পাতা উপযোগী নয়। নিমপাতা গর্ভপাতের কারণও হতে পারে। 

যে সকল ব্যক্তিরা নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তাদের নিমপাতা খাওয়া উচিত নয়। আপনাকে দিনে দুইটার বেশি নিমপাতা খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে উপকারের চেয়ে অপকার হওয়া সম্ভাবনা বেশি।

চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার

প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আজ এই পর্যন্ত ভেষজ ঔষধ হিসেবে চর্ম রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিম পাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চিকেন পক্স, আলসার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও নিমপাতা ব্যবহৃত হয়। নিম পাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে আপনি যে পানি দিয়ে গোসল করবেন সেই পানিতে কিছু নিমপাতা দিয়ে গোসল করলে চর্মরোগ থেকে দূরে থাকা যায় এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে। এভাবে চর্মরোগে নিমপাতার ব্যবহার করে চর্মরোগ ভালো করা যায়।

ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার

ব্রণের জন্য নিমপাতা আশীর্বাদস্বরূপ। ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার করলে ব্রণ ভালো হওয়া সম্ভাবনা থাকে। তাই কিছু পরিমাণ নিমপাতা পানিতে এক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভিজিয়ে রাখা পাতা ভালো করে পেস্ট করে সেই তৈরিকৃত পেস্ট ব্রণের উপর লাগাতে হবে। লাগানোর এক ঘন্টা পর ভালো করে ধুয়ে নিন। ধোয়া হয়ে গেলে ভালো একটি ময়েশ্চরাইজার লাগাতে হবে। এভাবে ব্যবহার করলে আপনার ব্রণ চলে যাবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হবে।

নিম পাতা দিয়ে গোসল করার উপকারিতা

আপনি যে পানি দিয়ে গোসল করবেন সেই পানিতে আপনি নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। তাই আমরা এখন নিম পাতা দিয়ে গোসল করার উপকারিতা সম্পর্কে জানব। নিমপাতা ব্যবহারের ফলে ত্বকের ক্লান্তি দূর হবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে নিম পাতার জুড়ি মেলা ভার। 

কিছু পরিমাণ নিমপাতা এক গ্লাস সমপরিমাণ পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। ফুটানো পানি আপনি যে পানি দিয়ে গোসল করবেন সেই পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই পানি দিয়ে গোসল করলে দেখবেন আপনার ত্বকের অনেক সমস্যা দূর হয়ে গেছে এবং ত্বকের সতেজতা লক্ষ্য করবেন।

মুখে নিম পাতার ব্যবহার

আমরা সবাই চাই আমাদের মুখ দেখতে সুন্দর থাক। তাই এই মুখ সুন্দর রাখার জন্য আমাদের ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার। ঘরোয়া পদ্ধতি হলো মুখে নিম পাতার ব্যবহার। কিছু পরিমাণ নিমপাতা পানি দিয়ে ভালো করে সিদ্ধ করে নিতে হবে। নিমপাতা সিদ্ধ করা পানিতে তুলার বল বানিয়ে পানিতে ডুবিয়ে মুখ ভালোভাবে মুছতে হবে। 
আপনি যদি আপনার মুখের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করতে চান তাহলে আপনাকে শশা-নিমের ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন কিংবা নিমপাতা-টক দইয়ের প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করুন। এইগুলি ব্যবহার করার ফলে মুখের বলিরেখা এবং মুখের দাগ দূর করার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকারী। এটা ব্যবহারের ফলে মুখের কালো ভাব দূর করে দেয়।

চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার

চুল পড়া আমাদের একটি কমন সমস্যা। চুল পড়ে না এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া ভার। তাই আমরা এই চুল পড়া রোধ করতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকে। এর মধ্যে কোনটা কার্যকর, কোনটা কার্যকর নয়। তাই আজ জেনে নেবো কোনটা কার্যকর উপায়।
  • নিম পাতার প্যাক বানিয়ে আপনি যদি চুলে ব্যবহার করেন চুল পড়া অনেকটাই কমে যাবে। নিম পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে চুলের আগা থেকে গোরা পর্যন্ত ভালোভাবে মেখে নিন। বিশ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করুন চুলে।
  • নিম পাতার রসের সাথে এক চা চামচ আমলকি রস, এক চা চামচ লেবুর রস, প্রয়োজনমতো টক দই মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারেন। এভাবে সপ্তাহে দুই দিন লাগিয়ে আধাঘন্টা অপেক্ষা করার পর শ্যাম্পু দিয়ে ফেলুন।
  • নিমপাতা ভালো করে বেটে নিয়ে চুলে লাগাতে পারেন। লাগানোর এক ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করতে পারেন। ফলে চুল পড়া কমে যাবে চুল কোমল ও উজ্জ্বল হবে। এভাবে আমরা চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার করতে পারি।

লেখকের মন্তব্য

শেষে বলা যায় নিম পাতা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী একটি পাতা। এটি ব্যবহারের ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম সমস্যা দূর করা যায়। নিমপাতা ব্যবহারের ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি। ত্বকের চর্মরোগের সমস্যা, মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করার জন্য নিম পাতার ব্যবহার অপরিসীম। কিন্তু নিমপাতা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমাদের নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখা দরকার। এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে নিবেন।








এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url