আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা জেনে নিন
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আজকের এই পোস্টে আমি
আমাশয় রোগের
ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করতে যাচ্ছি।
আমাশয়
হল একটি প্রদাহ যা আপনার অন্তে ঘটে এবং এর ফলে পেটে গুরুতর ব্যথা এবং ডায়রিয়া
হতে পারে। আমাশয় সাধারণত তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং এর কিছু
সাধারন লক্ষণ রয়েছে।
এই লক্ষণ গুলির মধ্যে বমি বমি ভাব, ১০০ ডিগ্রীর উপরে জ্বর আসবে এবংডিহাইড্রেশন
হবে। দুর্বল স্বাস্থ্যবিধির কারণে আমাশয় হয়ে থাকে এবং ডিহাইড্রেশনের কারণে
আপনার মৃত্যু হতে পারে। তাই আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে এ থেকে রক্ষা
পাওয়ার জন্য আজকের এই আর্টিকেল। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেট্রোনিডাজল
৪০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট খেতে হবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা জেনে নিন
ভূমিকাঃ আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা জেনে নিন
আমাশয় হলে কি ঔষধ খেতে হবে আপনাকে তা
সর্বপ্রথম
জানতে হবে। যেকোনো ধরনের
আমাশয়ের
জন্য সর্বপ্রথম আপনার করণীয় হলো খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা। আমাশয় আক্রান্ত
রোগীকে প্রচুর বিশ্রাম নিতে হবে। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের জন্য প্রচুর পরিমাণে তরল
ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে রোগীকে।
আরও পড়ুন ঃ খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা জেনে নিন
আমাশায় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানার জন্য এই পোস্টটি
আমাদেরকে ভালোভাবে পড়তে হবে। চলুন নিচের আলোচনা থেকে আমাশয়ের রোগের ঘরোয়া
চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিব।
পুরাতন আমাশয় থেকে মুক্তির উপায়
পুরাতন আমাশয় আমাদের একটি কমন সমস্যা। এই সমস্যায় আমরা বেশিভাগ মানুষ ভোগে
থাকি। পুরাতন আমাশয় থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ডাক্তার মোহাম্মদ নোমান ইসলাম
নিরব বলেছেন পুরাতন আমাশায় একটি সম্ভবত আমাশয় নয়, তিনি মনে করেন এটি আপনার
আইপিএস জনিত কোন সমস্যা হতে পারে। মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় আমরা বলতে পারি এটি
ইনফ্লামেটরি বায়েল সিন্ড্রোম।
এই কারণে আপনার যে সকল খাবার খেলে সমস্যা হয় সেগুলো খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে
অথবা কম খেতে হবে, বিশেষ করে আপনাকে দুধ ও শাক জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
এই সমস্যাকে আপনি কখনো রোগ ভাববেন না। এই রোগকে বলা হয় সাইকোলজিক্যাল রোগ। এই
সমস্যা না থাকার কারণে নরমাল ভাবে দিনে দুই একবার মলত্যাগের অভ্যাস থাকে।
কিন্তু যাদের এই সমস্যা থাকে তারা দিনে চার থেকে পাঁচ বার মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে
ওঠে। এক্ষেত্রে আপনাকে যে কোন একজন পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে
হবে। তবে আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে আপনি যদি তাৎক্ষণিক ফলাফল পেতে চান
তাহলে কয়েকদিন কয়েকটি আমলকি খেয়ে দেখতে পারেন। আশা করি ভালো ফল পাবেন।
পুরাতন আমাশয় রোগের আয়ুর্বেদিক ঔষধের নাম
আমরা বেশিরভাগ মানুষ পুরাতন আমাশয় ভোগে থাকি। পুরাতন আমাশয় রোগের আয়ুর্বেদিক
ঔষধের নাম হিসেবে আমরা এখন আলোকপাত করব। যেমন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে
ভেষজ কার্যকারী ঔষধ।
- কালো তুলসী ও আদা সমপরিমাণ ভাবে একসাথে পেস্ট করে তিনটি বড়ি তৈরি করে নিন, তৈরিকৃত বরি সকাল দুপুর এবং বিকেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে খেলে আমাশয় ভালো হয়।
- আধা তোলা ধূনা ও আধা তোলা কাশির চিনি একসাথে মিশিয়ে দুই থেকে তিন দিন খেলে পুরাতন আমাশয় হয় ভালো হয়।
- জাম পাতার রস ও ছাগলের দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন এক ছটাক পরিমাণ ৩ থেকে ৪ দিন খেলে পুরাতন আমাশয় রোগ ভালো হয়।
- এক টেবিল চামচ লবণের সাথে আম গাছের ছালের রস তিন চারদিন খেলে এই রোগ ভালো হয়।
- এক তোলা মিছরি, ডালিমের গাছের ছাল এক তোলা, এক লিটার পানির সাথে সিদ্ধ করে আড়াইশ গ্রাম পরিমাণে নিয়ে আসতে হবে। এই সিদ্ধ করা পানি সকাল ,দুপুর এবং বিকেলে খেলে এই রোগ ভালো হয়।
- জিরা এবং ডালিমের খোসার গুড়া সমপরিমাণ নিয়ে সেবন করলে এই রোগ ভালো হয়।
শিশুদের আমাশয় রোগের ঔষধের নাম
শিশুদের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ালে ভালো হয়। আপনার শিশুর প্রতি
আপনাকে সচেতন হতে হবে এবং বিশেষ করে শিশু বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্য কারো পরামর্শ
অনুযায়ী আপনার শিশুকে কোন রকম ঔষধ খাওয়াবেন না।
শিশুদের আমাশয়ের রোগের ঔষধের নাম জানার আগে আমাদের কিছু বিষয়ে জানা খুব জরুরী।
যেমন-প্রথমে আপনাকে আপনার সন্তানের বয়স চিহ্নিত করতে হবে কারণ ঔষদের ডোজ শিশুদের
বয়স এবং তাদের অবস্থার উপর নির্ভর করে। আপনি সাধারণত যেসব ঔষধ ব্যবহার করতে
পারেন।
- মেট্রোনিডাজল(প্রতি ঘন্টায় শরীরের ওজন ৭.৫মিলিগ্রাম/কেজি। তবুও এই ডোজটি গুরুতর অবস্থায় বাড়ানো যেতে পারে)।
- আন্টিবায়োটিক: সিপ্রোফ্লক্সাসিন (১০-২১ দিনের জন্য প্রতি ১২ ঘন্টায় শরীরের 10-20mg/kg। যাই হোক ডোজ সাধারণত প্রতিদিন ৭৫০ মিলিগ্রামের বেশি হওয়া যাবে না।
- রিঙ্গারের ল্যাকটেট IV তরল(ডোজগুলি অবস্থার ওপর নির্ভর করে)।
- ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে প্রচুর পরিমাণে তাজা মিনারেল ওয়াটার পান করুন।
- প্রচুর পরিমাণে লেবুর রস সেবন করুন।
- ফলমূল এবং মসলা না দিয়ে রান্না করা খাবার আপনার শিশুকে দেওয়া যেতে পারে।
আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা বা আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বলতে গেলে
আমরা বলতে পারি। এই রোগ হলে একই সঙ্গে তরল খাবার প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে যেমন
ঠান্ডা পানি, ডাবের পানি, ফলের রস, চিনির শরবত ইত্যাদি খাবার খেতে হবে। আপনার যদি
অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে তাহলে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিগেলা প্রজাতির আমাশয় যাদের আছে তাদের
এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে এই রোগ পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। আমাশয় রোগের ঘরোয়া
চিকিৎসা হিসেবে কিছু টিপস আছে সেগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করব। যেমন-
- ডালিমের খোসা- আমাশয়ের রোগ ভালো করার জন্য ডালিমের খোসা সিদ্ধ করে খেতে পারলে এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব। কাঁচা কিংবা শুকানো ডালিমের খোসা গুড়া করে সামান্য মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া ডালিম গাছের ছাল গুড়া করে খেতে পারলে আমাশয় রোগ ভালো হয়।
- কাঁচা কলা- আমাশয় রোগ ভালো করার জন্য কাঁচা কলা বেশ কার্যকারী। আপনি যদি প্রতিদিন কাঁচা কলার তরকারি বা ভর্তা করে খান তাহলে এই রোগ থেকে সহজে আপনি মুক্তি পাবেন। আমার সাথে রোগ ভালো করার জন্য কাঁচা কলার ভর্তা বা তরকারি খুবই প্রয়োজন।
- থানকুনি পাতা- থানকুনি পাতা আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা মধ্যে অন্যতম। আমাশয় দূর করার জন্য থানকুনির পাতা সকালে ঘুম থেকে উঠে রস করে পানির সাথে সামান্য মধু ও চিনি দিয়ে মিশিয়ে খেলে আমাশয় রোগ ভালো হয়।
- বেল- আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা মধ্যে বেল অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। আপনি যদি প্রতিদিন পাকা বেল খেতে পারেন তাহলে খুব সহজেই আমাশয় রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
- তেঁতুল পাতা ও জিরা- তেঁতুল পাতা ও জিরা এই দুই উপাদানের মিশ্রণ আমাশয় রোগ ভালো করার জন্য খুবই উপযোগী। এটা করার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম তেঁতুল পাতা সংগ্রহ করতে হবে। তারপর ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে, শুকানো পাতা গুড়া করে নিতে হবে, পাতাগুড়ো ও জিরাগুড়ো একসাথে পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে তাহলে পুরাতন আমাশয় দূর হবে।
- পানি- আমাশয় রোগ ভালো করার জন্য পানির গুরুত্ব অপরিসীম। এই সমস্যার জন্য কিছুক্ষণ পর পর আপনাকে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে। তবে যে পানিতে সামান্য একটু আয়রন রয়েছে সেই পানি একদম খাওয়া যাবেনা। শরীরকে সুস্থ ও তাজা রাখার জন্য এবং আমাশয় কমাতে পানি অত্যন্ত প্রয়োজন।
- আদাও শুঠের গুড়া- আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা এর মধ্যে অন্যতম একটি পদ্ধতি হচ্ছে আদা ও শুঠের গুড়া খুবই কার্যকরী। আদা ও শুঠের গুড়া পানিতে মিশিয়ে খেলে আমাশয় রোগ ভালো হয়।
আমাশয়ের রোগী যে খাবার এড়িয়ে চলবেন
আমাশয় রোগীদের জন্য কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হয়। আমাশয় রোগীরা বিভিন্ন ধরনের
খাবার খেতে পারেন । তবে তাদের খাবার তালিকায় নির্দিষ্ট কিছু খাবার রাখতে হবে।
তবে সেগুলো উপরে আলোচনা করা হয়েছে। তাই আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে
রোগীদের কিছু খাবার খাওয়া নিষেধ রয়েছে বা আমাশয়ের রোগী যে খাবার এড়িয়ে চলবেন।
যেমন-১.আমাশয় রোগীর দুধ জাতীয় সকল খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে ।
আরও পড়ুন ঃ জেনে নিন ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন
২. যে সবজি জাতীয় খাবার খেলে আপনার পেটে গ্যাস বা সমস্যা দেখা দিতে পারে সে
খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ৩. কিসমিস বা আঙ্গুর ফল কখনো খাবেন না ৪. গমের
আটা বা গমের আটা দ্বারা তৈরি কোন কিছু খাওয়া যাবেনা ৫. অতিরিক্ত মসলা জাতীয়
খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ৬. আপনি ইচ্ছা করলে বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে পারেন
কিন্তু যে ফল খেলে আপনার পেটের সমস্যা দেখা দিবে সেই ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে
হবে ।
৭. বাসি বা পচা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে ৮. মুগ ডাল, মসুর
ডাল বা যে কোন ডাল দিয়ে তৈরি করা খাবার খাওয়া যাবে না ৯. বাইরে বিভিন্ন রকম
ভাজাপোড়া বা খোলা খাবার খাওয়া থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে।
সাদা আমাশয় রোগের ঔষধের নাম
আপনার যদি যেকোনো প্রকারের আমাশয় হয়ে থাকে তবে আপনার প্রথম করণীয় কাজ হলো আবার
স্যালাইন খাওয়া। এবং অনেক সময় ধরে রোগীকে বিশ্রাম নিতে হবে। যাতে আপনার
ডিহাইড্রেশন না হয় এজন্য আপনাকে প্রচুর পরিমাণে তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
অতিরিক্ত সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মেট্রোনিডাজল
৪০০ মি:গ্রাম ঔষধ খেতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
পরিশেষে উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি আমাশায় রোগ কমন একটি রোগ।
অধিকাংশ মানুষই আমরা এই রোগে ভুগে থাকি। এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য আমাশয় রোগের
ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসার সম্পর্কে এই আর্টিকেলে বিশদভাবে আলোচনা
করেছি। এই আলোচনা যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আমাকে কমেন্টে জানাবেন এবং
আপনার যদি কোন মতামত থাকে সেটা নিয়েও কমেন্ট করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url