জেনে নিন ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা সবাই ভালই আছেন। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে আজকের এই আর্টিকেলে আমি ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন নিয়ে আলোকপাত করতে যাচ্ছি। এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানতে পারবেন। ক্রিকেট খেলার নিয়ম নিয়ে আজকের আলোচ্য বিষয়।
ক্রিকেট খেলা পরিচালনার জন্য বর্তমানে ৪২ টি আইন রয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে কিভাবে খেলা শুরু হবে, জয় পরাজয় নির্ধারিত হবে, কিভাবে ব্যাটসম্যান আউট হবে, পিচের মাপ, প্রস্তুত প্রণালী ও সংরক্ষিত হবে ইত্যাদি বিষয়গুলোর বিস্তারিত রূপরেখা এখানে তুলে ধরা হবে। ১৭৮৮ সালে ক্রিকেট খেলার আইন প্রণয়নের দায়িত্ব নেয় এমসিসি। চলুন আজকের এই আর্টিকেলে ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানব।
পোস্ট সূচীপত্রঃ জেনে নিন ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন
ভূমিকাঃ জেনে নিন ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন
ক্রিকেট খেলার জন্ম কোথায়? একথা হয়তো অনেকেরই অজানা। ক্রিকেট খেলার জন্ম হচ্ছে ইংল্যান্ডে। একে রাজার খেলা নামে অভিহিত করা হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক, দিনব্যাপী খেলা, দুপুরের খাবার, বিকেলের চা নাস্তা নিয়ম কানুনের মধ্যে ভদ্রাচরণ, এসব মিলে এই খেলাকে অভিজাত ও ভদ্র খেলা হিসেবে গণ্য করা হয়।
ক্রিকেট খেলার বিপুল জনপ্রিয়তা থাকার কারণে এর নিয়ম কানুন প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণ প্রচার, ব্যবস্থাপনা ,প্রভুতি বিষয়ের জন্য একটি আন্তর্জাতিক কমিটির প্রয়োজন হয়। তাই এই আর্টিকেলে আমরা ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন সম্পর্কে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।
ক্রিকেটের নতুন নিয়ম
ভারতের ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বাধীন পুরুষ ক্রিকেট কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করে আইসিসি প্রধান নির্বাহীদের কমিটি(সিইসি)। এই অনুমোদনের পর ক্রিকেটের প্রধান সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এর পরিবর্তন ঘোষণা করেছে। আইসিসি থেকে এক বিবৃতিতে এই পরিবর্তনের কথা জানানো হয়েছে। যে নিয়ম গুলো বদলানো হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জানব-
ক্যাচ আউটে নতুন ব্যাটসম্যানের অবস্থান- নতুন নিয়ম অনুযায়ী কোন ব্যাটসম্যান ক্যাচ আউট হলে নতুন ব্যাটসম্যান ক্রিজে স্টাইকে খেলবেন। এই নিয়ম হওয়ার আগের নিয়ম ছিল ব্যাটসম্যান ক্যাচ আউট হলে ২ ব্যাটসম্যান যদি নিজেদের ক্রস করে ফেলে তাহলে নতুন ব্যাটসম্যান ননস্টাইকে খেলবে।
বলে লালার ব্যবহারে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা- করোনা ভাইরাস সংক্রমনের পর থেকে বলে লালা ব্যবহার আইসিসি থেকে একবারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এই নিয়ম চলে আসছে। আগের নিয়ম অনুযায়ী বলে লালা লাগলে প্রথমবার দলকে কে সতর্ক করা হতো। দ্বিতীয়বারে একই ভুল হলে শাস্তি দেওয়া হতো।
নতুন ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং শুরুর সময়- আগের নিয়ম অনুযায়ী টেস্ট ও ওয়ানডে ফরমেটে দুই মিনিটের মধ্যে নতুন ব্যাটসম্যান কে প্রথম বল খেলতে হবে। বর্তমান নতুন নিয়ম অনুযায়ী ওয়ানডে ও টেস্ট ব্যাটসম্যানরা তিন মিনিট সময় পেয়ে থাকেন। টি-টোয়েন্টির ক্ষেত্রে ৯০ সেকেন্ডেই থাকছে।
পিচে খেলতে হবে ব্যাটসম্যান ও বলার কে- বলার যখন বল করবে ডেলিভারি কৃত বল খেলার জন্য ব্যাটসম্যানের ব্যাট বা শরীরের যে কোন অংশ পিচের ভিতর থাকতে হবে। না থাকলে ডট বল হিসেবে গণ্য হবে। আবার বলারের কোন ডেলিভারি যদি ব্যাটসম্যানকে পিচের বাহিরে নিয়ে যায় তবে সেটি নোবল হবে।
বোলিং শুরু করার পর ফিল্ডিং পরিবর্তন করা যাবে না- বলার যখন বল করার জন্য দৌড় শুরু করবে তখন ফিল্ডিং দল নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারবে না। নতুন নিয়মে এটি করলে প্লান্টিক ধরা হবে পাঁচ রান যোগ করা হবে। পাশাপাশি এই বল কে ডেট বল ঘোষণা করা হবে।
নন -স্ট্রাইকারকে মানকাডিং আউটের বৈধতা- নতুন নিয়ম অনুযায়ী মান কাডিং রান আউট হিসেবে গণ্য হবে। এতদিন ধরে পুরাতন নিয়মকে ক্রিকেটের নৈতিকতা পরিপন্থী বিবেচনা করা হতো।
বল ডেলিভারির আগেই স্ট্রাইকারকে রান আউটের চেষ্টা বাতিল- নতুন নিয়ম অনুযায়ী স্ট্রাইকের ব্যাটসম্যানকে রান আউটের সুযোগ আর নাই। আগের নিয়ম অনুযায়ী বলার বোলিং করার আগে যদি দেখেন ব্যাটসম্যান ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়েছেন তখন বল থ্রো করে আউট করার সুযোগ ছিল। এখন আর এই সুযোগ নেই।
অন্যান্য বড় সিদ্ধান্ত- এখন থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট স্লো ওভার রেটের কারণে ম্যাচের মধ্যে প্লান্টি দেয়া শুরু হয়েছে। খেলাটি যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে না পারে বৃত্তের বাইরে একজন কমফিল্ডার নিয়ে খেলতে হয় ফিল্ডিং দলকে। চলতি বিশ্বকাপ লিগ শেষে ওয়ানডে ক্রিকেটে এটি কার্যকর করা হবে।
ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার নিয়ম
ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার কিছু নিয়ম আছে আমরা তা এই আর্টিকেলে আলোকপাত করবো। ওয়ানডে ক্রিকেটের অফিশিয়াল নাম ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল বা ওডিআই। ওয়ানডে ক্রিকেট মানে হচ্ছে একটা লিমিটেড ওভার খেলা। যেখানে দুই দলের মধ্যে আন্তর্জাতিক স্ট্যাটাস অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট ওভারের খেলা সংঘটিত হয়ে থাকে। আর এই খেলা একদিনের মধ্যেই শেষ করতে হয়। ওয়ানডে ক্রিকেটই একদিনব্যাপী হয়ে থাকে।
এই খেলা সাধারণত ৫০ ওভারে সংঘটিত হয়। এভাবে একদিনে ১০০ ওভার খেলতে হয়। এই খেলা সাধারণত দুইটি আন্তর্জাতিক দেশের দলের সাথে হয়ে থাকে। যেমন ধরুন বাংলাদেশ দল এবং ভারত দলের সঙ্গে একটি ওয়ানডে ক্রিকেটের আয়োজন করা হয়েছে। এখন সেই খেলা শুরুর আগে টস করা হবে। টসে জয়ী হওয়ার পর আপনি ব্যাটিং অথবা বোলিং নিতে পারেন। মনে করুন বাংলাদেশ টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিল।
এখন ভারত বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫০ ওভার বল করবে সেই পঞ্চাশ ওভার খেলে যতদূর রান করা সম্ভব করবে। আপনি মনে করুন বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৩০০ রান করেছে। এক্ষেত্রে ভারতের টার্গেট হবে ৩০১ রান। পরবর্তীতে ভারত ব্যাট করতে নামবে এবং বাংলাদেশ ৫০ ওভার বল করবে। যদি ভারত ৫০ ওভার খেলার মধ্যে বাংলাদেশের দেওয়া টার্গেট ৩০১ রান করতে পারে তাহলে সেই ওয়ানডে ম্যাচে ভারত জয়ী হবে।
যদি ৫০ ওভারের মধ্যে বাংলাদেশের দেওয়ার ৩০১ রান করতে না পারে সে ক্ষেত্রে ভারত হেরে যাবে বাংলাদেশ জয়ী হবে। এছাড়া যদি ভারত ৩০১ রান না করে ৩০০ রান করে তাহলে সেই খেলা ড্র হবে। এরপর দুই দলকে এক ওভার করে খেলানো হবে। এটাকে সুপার অভার বলে। এই সুপার ওভার খেলার ক্ষেত্রে যে দল বেশি রান করবে সেই দল জয়ী হবে।
আবার এই সুপার ওভার খেলার সময় দুই দল সমান সমান রান করে সে ক্ষেত্রে যে দল বেশি বাউন্ডারি মারবে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন আমরা জানতে পারলাম।
ক্রিকেট খেলার উপকারিতা
অনেকেই আমরা এই খেলা নিয়মিত খেলে থাকি কিন্তু আমরা জানি না এই খেলার উপকারিতা। তাই আমরা এখন জানবো ক্রিকেট খেলার উপকারিতা। শরীর গঠনের জন্য এই খেলা খুব উপযোগী। আপনি যদি প্রতিদিন এক ঘন্টা ব্যাটিং করেন তাহলে আপনার শরীর থেকে প্রায় ৪৩০ ক্যালোরি শক্তি ব্যয় হবে। আবার আপনি যদি এক ঘন্টা বোলিং করেন তাহলে আপনার শরীর থেকে প্রায় ৮০০ ক্যালোরি শক্তি খরচ হবে।
এছাড়া আপনি যদি ব্যাটিং ও বোলিং নিয়মিত করেন সেক্ষেত্রে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন। ব্যাটিং ও বোলিং করার মাধ্যমে আপনার হাত-পায়ের পেশী শক্তিশালী হবে। তাছাড়া আপনি যদি ব্যাটিং ও বোলিং বাদ দিয়ে ফিল্ডিং করার চিন্তাভাবনা করেন তাহলে আপনার ব্যায়াম করার সময় বেঁচে যাবে। আসুন আমরা ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে আমাদের শরীর ও মন দুটোকেই প্রফুল্ল রাখি।
ক্রিকেট খেলার জনক কে
ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন জানার পাশাপাশি আমাদেরকে অবশ্যই ক্রিকেটের জনক কে এটা জানা দরকার। ক্রিকেট খেলার জনক কে একথা বলতে গেলে আমরা বলতে পারি উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস বলা হয় ফাদার অফ ক্রিকেট। তার নিকনেম হচ্ছে ডাব্লিউ.জি। দ্য চ্যাম্পিয়ন, দ্য ডক্টর, দ্য বিগ ইউ এন, সহ অনেক নামেই ডাকা হয়। বিশেষ করে তিনি ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। তিনি একসাথে বলার এবং ব্যাটসম্যান মানে অলরাউন্ডার ছিলেন।
T20 ক্রিকেট খেলার নিয়মাবলী
টুয়েন্টি২০ বা টি ২০ ক্রিকেট খেলার সংক্ষিপ্ত সংস্করণ হিসেবে বিবেচিত। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের আন্তঃকাউন্টি ক্রিকেট প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এর শুভ সূচনা ঘটে। এই টি-টোয়েন্টি খেলার মূল উদ্দেশ্য হলো ক্রিকেট খেলাকে আরো বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ করা। পাশাপাশি মাঠের দর্শকদের কাছে টেনে আনা কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় দর্শকদের নির্মল আনন্দ উপহার দেওয়া। বর্তমানে এ ধরনের খেলা অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
কিন্তু ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড এই সংক্ষিপ্ত সংরক্ষণ হিসেবে টি-টোয়েন্টি খেলাকে শুরুতে গ্রহণ করেননি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলা বিশ্বে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক ট্যুরে কমপক্ষে একটি ২০ খেলার অন্তর্ভুক্তি থাকে। সকল ক্রিকেট টেস্ট খেলার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো অভ্যন্তরের প্রতিযোগিতার পাশাপাশি টি২০ খেলার ব্যবস্থা রেখেছে। এই টি ২০ খেলায় পরস্পর দুইটি দল অংশগ্রহণ করে।
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পার্থক্য হল সর্বোচ্চ ২০ ওভার পর্যন্ত ইনিংসে ব্যাটিং করতে পারবে। টি-টোয়েন্টি খেলাটি সম্পূর্ণ শেষ হতে সাড়ে তিন ঘন্টা সময় লাগে। অর্থাৎ প্রত্যেক দল ১০০ মিনিট করে ইনিংস শেষ করার জন্য সময় পাবে। এই খেলার মধ্যবর্তী সময় ১০-২০ মিনিট বরাদ্দ রয়েছে।
ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম এর নাম
ক্রিকেট খেলার জন্য যে সকল সরঞ্জামাদির প্রয়োজন হয় সেগুলো নিয়ে এখন আমরা আলোচনা করব। টিকেট খেলার সরঞ্জামের নাম যেমন-ব্যাট, বল, ব্যাটিং গ্লাভস, উইকেট কিপিং গ্লাভস, ব্যাটিং প্যাড, উইকেট কিপিং প্যাড, বিভিন্ন ধরনের গার্ড, স্ট্যাম্প জার্সি ইত্যাদি। এ সকল সরঞ্জামাদির চাহিদাকে কেন্দ্র করে গোটা বিশ্ব গড়ে উঠেছে বিশাল বাজার। বাংলাদেশ ক্রিকেট একটি জনপ্রিয় খেলা হয় এসব সরঞ্জামের চাহিদা আমাদের দেশেও ব্যাপক।
লেখকের মন্তব্য
লেখার শেষে আমি বলতে চাচ্ছি। আমি আশা করি আপনারা উপরের এই পোস্টটি পড়ে ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। আমি চেষ্টা করেছি আপনাদেরকে ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানানোর। যদি এই পোস্ট লেখার মধ্যে কোন ভুল আমি করে থাকি তাহলে অবশ্যই কমেন্টে করে আমাকে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url