ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের উপকারিতা জেনে নিন
এই আর্টিক্যাল এ আমরা ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
হলুদ রান্নার কাজে ব্যবহৃত পণ্য হলেও প্রাচীনকাল থেকেই এটি ব্যবহার হয়ে আসছে
রূপচর্চার কাজে। ত্বকের রং উজ্জ্বল হওয়া থেকে শুরু করে এলার্জি, র্যাশ, ব্রণ,
এমনকি পুরা দাগ দূর করতে পারে হলুদ ব্যবহারের ফলে। এজন্য ত্বকের যত্নে কাঁচা
হলুদের উপকারিতা অনেক।
ত্বকের ভেতর ও উপরিভাগ উভয়ের জন্য হলুদ কার্যকরী উপাদান। হলুদ ব্যবহারের জন্য
হলুদের সাথে কিছু মিশিয়ে নেওয়াটাই ভালো। সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ব্যবহার করা
সবচেয়ে উত্তম এর বেশি ব্যবহার করা যাবে না। যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের ত্বকে
হলুদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান নেওয়া উচিত।
পোস্ট সূচিপত্রঃত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের উপকারিতা জেনে নিন
ভূমিকাঃত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের উপকারিতা জেনে নি
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা হলুদে এমন এক উপাদান রয়েছে যা গ্যাস-নিরোধক করে।
গ্যাস-অম্বলের সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য নিয়মিত কাঁচা হলুদ খাওয়া ভালো।
মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কাঁচা হলুদ সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত
কাঁচা হলুদ খাওয়া হলে ডিমেনশিয়া, অ্যালঝাইমার্স-সহ মস্তিষ্কের বেশ কিছু সমস্যা
কয়েক হাত দূরে চলে যেতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগের মত সমস্যাগুলিকে হলুদ প্রতিরোধ করতে পারে। দেহের
মধ্যে থাকা অতিরিক্ত কোলেস্টরলের মাত্রা কম করতে সাহায্য করে হলুদ। আর আপনি যদি
নিয়মিত কাঁচা হলুদ খান তাহলে আপনার স্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যেতে পারে।
কাঁচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা
রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহৃত মসলাজাতীয় পণ্য হলুদ হলেও প্রাচীনকাল থেকেই এটির
ব্যবহার হয়ে আসছে রূপচর্চায়। এজন্য কাঁচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা অনেক আগের প্রথা।
ত্বকের রং উজ্জ্বল করা থেকে শুরু করে, র্যাশ, এলার্জি, ব্রণ, পুরা দাগ দূর করতে
পারে হলুদের ব্যবহারের মাধ্যমে। সৌন্দর্যের অপার রাজত্বের নাম হলুদ। উপাদানটি
রূপচর্চার ইতিহাসে চিরন্তন। তাই পরীক্ষিত ভেষজ উপাদান হলুদকে বলা হয়ে থাকে। এতে
অনেক গুনাগুন রয়েছে।
ত্বকে হলুদ ব্যবহারের ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর পাশাপাশি আরও বিভিন্ন
ধরনের উপকার হয়ে থাকে। তবে কাঁচা হলুদ ত্বকে ব্যবহারের আগে এর কোন পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া আছে কিনা তার জেনে নেওয়া ভালো। ব্যবহারের আগে ভালোভাবে নিয়ম
জেনে ব্যবহার করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে না। কাঁচা হলুদের সঙ্গে আপনার
দরকার, দুই টেবিল চামচ পরিমাণ কাঁচা হলুদ বাটা, এক টেবিল চামচ পরিমাণ চালের
গুড়া অথবা বেসন, দুই টেবিল চামচ দুধ বা দই(তেলতেলে ত্বক হলে) অথবা
নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েল (শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে) আর ১ টেবিল
চামচ মধু। এই উপাদানগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে একটি সুন্দর ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন।
তৈরি করা পেস্টটি মুখের ত্বকে সমান করে মেখে নিন । ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে মুখ
ধুয়ে ফেলুন। ভালোভাবে মুখ ধোয়ার পর প্রথমে টোনার সবশেষে ময়শ্চারাইজার অবশ্যই
লাগাবেন।
কাঁচা হলুদ দিয়ে কিভাবে ফর্সা হওয়া যায়
ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের উপকারিতা অনেক। কাঁচা হলুদ দিয়ে কিভাবে ফর্সা হওয়া
যায় তা আমরা এখন আলোচনা করব। এক চা চামচ হলুদ গুড়ার সাথে এক চা চামচ ময়দা,
আধা চা চামচ কাঁচা দুধ, এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট বা প্যাক তৈরি
করে নিন। তারপর পেস্টটি ঘাড়ে এবং মুখে ভালো করে লাগিয়ে নিন। লাগানোর পর
শুকিয়ে গেলে ভালো করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে প্যাকটি
প্রতিদিন ব্যবহার করার ফলে উজ্জ্বল দাগহীন ত্বক পাবেন।
কাঁচা হলুদ দিয়ে কিভাবে ফর্সা হওয়া যায় তার উপায় জানতে কে না চায়। একজন
মেয়ে তার মনের বাসনা তার গায়ের রং ফর্সা হোক এবং চেহারা উজ্জ্বল হোক। তবে
চাইলেই তো সবকিছু সবসময়ই হয় না এর জন্য প্রয়োজন কিছু করণীয়। মানুষ সুন্দর
হওয়ার জন্য ছুটছেই তো ছুটছে । ত্বক সুন্দর ও উজ্জ্বল করার জন্য কেমিক্যাল
প্রোডাক্ট সবাই বেছে নিচ্ছে। এজন্য বাজারে কেমিক্যাল প্রোডাক্ট এর চাহিদা বেশি।
আমরা জানি এই প্রোডাক্ট ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
তারপরও আমরা এই প্রোডাক্ট বেছে নিচ্ছি। এই খারাপ প্রোডাক্টগুলো থেকে নিস্তার
পাওয়ার জন্য আজকে আমি সেই সুন্দর পিপাসুদের জন্য অসাধারণ কিছু উপাদান নিয়ে
আলোচনা করতে যাচ্ছি। সেগুলোর সঠিক ব্যবহারের ফলে স্থায়ী ফর্সা হওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে। আপনি যতই ক্রিম ব্যবহার করেন না কেন সেগুলো দীর্ঘস্থায়ী নয়।
স্থায়ী ভাবে ফর্সা হতে হলে প্রয়োজন প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্য নেওয়া। যেমন:
কাঁচা হলুদের সঙ্গে লেবুর রস, চালের গুড়া বা বেসন, দই বা দুধ, নারকেল তেল বা
অলিভ অয়েল, এবং মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।
কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম
ক্যান্সারের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা থেকে বাঁচার জন্য রোজ সকালে খালি পেটে এক
টুকরা কাঁচা হলুদ খুবই দরকারী। কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী খেলে হার্টের
বেশ কিছু সমস্যা দূর হয়ে যায়। কাঁচা হলুদ হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।
সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। কাঁচা হলুদ খেলে রক্ত
পরিষ্কার রাখে এবং সেইসাথে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তবে করোনা কালীন
সময়ে করোনা প্রতিরোধেও হলুদের ভূমিকা রয়েছে।
হলুদে যে কারকিউমিন উপাদান রয়েছে তার অনেক গুণাগুণ আছে। তবে ঝাঁঝালো হলুদ
কিভাবে খাওয়া যায় এটা জানা দরকার। চিকিৎসকেরা বলেছেন, দুধের সঙ্গে মিশিয়ে
খেতে হবে হলুদ। তবে গুড়া হলুদ খাওয়া ঠিক না, এতে বিষাক্ত মেটালিন হলুদ রং
বালি, ময়দা ইত্যাদি মিশ্রিত থাকতে পারে। এজন্য কাঁচা হলুদ খাওয়া উপযোগী।
কাঁচা হলুদ ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে খাওয়া যায় কাঁচা অবস্থাতে বেটে নিয়ে
খাওয়া যায়।
কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম
কাঁচা হলুদ ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী। এটি প্রাচীন একটি পদ্ধতি। যা বছরের পর
বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে। কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম, কাঁচা হলুদ বাটার
সঙ্গে গোলাপজল, দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে নারীরা মুখে লাগান যাতে তাদের ত্বক উজ্জ্বল
হয় বা সুন্দর হয়। হলুদের পেস্ট তৈরি করার জন্য পানি একমাত্র ভালো উপকরণ।
এজন্য হলুদ ব্যবহার করার জন্য আমাদের অনেক কিছু ভুল হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেই
এই ভুলগুলো-
- আলাদাভাবে হলুদ নিজেই একটি শক্তিশালী উপাদান। আপনাকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে যখন আপনি হলুদের সঙ্গে গোলাপজল, অথবা পানি মিশাবেন। অন্যান্য উপাদানের চেয়ে পানির সবচেয়ে ভালো উপাদান, যা হলুদের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগালে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
- মিশ্রণটা অনেকক্ষণ মুখে লাগানোর পর রেখে দেওয়া হয় এটা ঠিক না এতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। হলুদের মিশ্রণটি লাগানোর পর ২০ মিনিটের মধ্যে মুখ ধুয়ে ফেলুন যদি না ধন মুখ কালো হয়ে যাবে।
- অনেকেই মুখে মিশ্রণটি লাগানোর পর মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করেন না। এদের ত্বকের বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে। তাই হলুদের মিশ্রণটি লাগানোর পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালো হবে ধুয়ে ফেলতে হবে।-
- অনেকেই হলুদের মিশ্রণটি শুধু মুখেই লাগান গলা বা কাঁধে লাগান না। এতে দুটোর রং অনেক আলাদা মনে হয়। তাই আপনি যখন হলুদ ব্যবহার করবেন মুখ, গোলা,কাঁধে সব জায়গায় সমানভাবে ব্যবহার করবেন।
- অনেকেই হলুদ ব্যবহার করার পরে আবার মুখে ফেসওয়াশ ব্যবহার করেন এটা ঠিক না। ফেসওয়াশ ব্যবহারের ফলে হলুদের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই হলুদ ব্যবহারের পরে মুখে কিছু লাগাবেন
কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা
আজকে আমরা জানবো কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। কাঁচা হলুদের
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। যেমন: হৃদরোগের
উন্নতি ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করার সম্ভাবনা। চলুন জেনে নেই কাঁচা হলুদের
উপকারিতা ও অপকারিতা।
কাঁচা হলুদের উপকারিতা-ব্যথা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে খুবই
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কাঁচা হলুদ তার কারণ হচ্ছে বাচ্চা হলুদের
প্রচুর পরিমাণে এন্টি -ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে সেগুলি আমাদের শরীরের
বিভিন্ন ব্যথা কমাতে অনেক ভূমিকা পালন করে। তাই আমরা যদি নিয়মিত কাঁচা হলুদ
খেয়ে থাকি তাহলে বিভিন্ন রকম ব্যথা এবং যন্ত্রনা থেকে রক্ষা এবংআর্থ্রাইটিস
এর ব্যথা, এছাড়া কোমর ব্যথা হাঁটুর ব্যথা সকল ব্যথার ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া
যায়।
কাঁচা হলুদ আমাদের লিভার বা যকৃতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ কাঁচা
হলুদের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা লিভার
বা যকৃতের উৎপন্ন টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থকে আমাদের শরীর থেকে বের করতে
সাহায্য করে। রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে অন্যতম একটি
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল হল। যারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হলুদ খান।
তাদের শরীরের অনেক কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাবে
ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন এর কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রক্তের শর্করার
পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাই মরণব্যাধি ডায়াবেটিসের মতো রোগে যদি
আক্রান্ত হতে না চান তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অবশ্যই কাঁচা হলুদ খেতে
পারেন।
কাঁচা হলুদের অপকারিতা-প্রচুর পরিমাণ বায়ো-অ্যাকটিভ উপাদান রয়েছে
কাঁচা হলুদে আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপযোগী কিন্তু খুব বেশি কাঁচা হলুদ খেলে
আমাদের হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। পেটে গ্যাস্টিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে
যেতে পারে ফলে আমাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য কাঁচা হলুদ
খুব একটা বেশি খাওয়া উচিত না।
শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের উপকারিতা অনেক। ত্বকের যত্নে
কাঁচা হলুদ বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যায়। হলুদের গুনের কথা বর্ণনা করে
শেষ করা যাবে না। রূপচর্চার ক্ষেত্রে হলুদের ভূমিকা অনেক। অতীতের নারীরা হলুদ
ব্যবহার করতেন। যদি এই পোষ্টের লেখা আপনাদের ভালো লেগে থাকে বা দরকারি মনে
করে থাকেন তাহলে নিজেদের প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url