জেনে নিন অতিরিক্ত ঘুমালে শরীরের যেসব ক্ষতি হয়

আসসালামু আলাইকুম। আজকে এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন অতিরিক্ত ঘুমালে শরীরের যেসব ক্ষতি হয়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন দেহ -মনকে সুস্থ রাখার জন্য ঘুমের কোন বিকল্প নেই। তাই ঘুমের অভাব দূর করা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু অতিরিক্ত ঘুমালে শরীরের যেসব ক্ষতি হয় তা এটা নিয়েই আজকের আলোচ্য বিষয়। 
জেনে নিন অতিরিক্ত ঘুমালে শরীরের যেসব ক্ষতি হয়

একটি গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপিং ফাউন্ডেশন সাম্প্রতিক সময়ে একটি গবেষণায় বলেছেন ১৮ বছর থেকে ৬৪ বছর বয়সী একজন মানুষকে ভালোভাবে সুস্থ থাকার জন্য ২৪ ঘন্টায় ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানোই তার জন্য যথেষ্ট।

পোস্ট সূচপত্রঃ জেনে নিন অতিরিক্ত ঘুমালে শরীরের যেসব ক্ষতি হয়

ভূমিকাঃ জেনে নিন অতিরিক্ত ঘুমালে শরীরের যেসব ক্ষতি হয়

অনেকের আবার স্বভাব আছে ঘুমকাতুরের। এমন কিছু মুহূর্ত আছে এমন সময় ঘুম ভাব আসলে এই সময়টা এড়ানো খুব কষ্টকর। এমন সময় আপনি বিছানায় আরাম করে শুয়ে পড়লেন আবার আবহাওয়াটা ঘুম ফেভারে। ব্যাস হয়ে গেল একটু বেশ ঘুম। অবশ্য বয়জোষ্ঠ লোকেরা বলে থাকেন বেশি ঘুমানো ভালো না। এই কথা একেবারে সত্য। আবার অতিরিক্ত ঘুমালে শরীরের যেসব ক্ষতি হয়। 
তার পাশাপাশি আমরা বলতে পারি অতিরিক্ত ঘুমের অভাবে স্মৃতিশক্তি লোপ, বদহজম, ক্লান্তি ভাব এর মত সমস্যা দেখা দেয়। আপনার কম ঘুমের ফলে যেমন হৃদযন্ত্রের সমস্যা হতে পারে, আবার বেশি ঘুমানোর ফলেও আপনার হৃদ যন্ত্রের সমস্যার কারণ হতে পারে। যারা দিনে ঘুমানো পছন্দ করেন বা ৯ ঘন্টার বেশি ঘুমান তাদের হৃদযন্ত্রের ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।

অতিরিক্ত ঘুমালে কি রোগ হয়

আমরা কেন অতিরিক্ত ঘুমাই বা প্রতিটা মুহূর্ত ঘুম পাওয়ার সমস্যা কে বলা হয় হাইপারসোমনিয়া। এই সমস্যা যাদের আছে তারা রাতে অতিরিক্ত ঘুমানোর পরও দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম অনুভব করে থাকেন। এই সমস্যার কারণে আপনার কর্মজীবন ও দৈনন্দিন জীবনে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত ঘুমালে শরীরের যেসব ক্ষতি হয় বা অতিরিক্ত ঘুমালে কি রোগ হয় আমরা এখন তা জানব।

আমাদেরকে সুস্থ থাকার জন্য পরিপূর্ণ ঘুম সবার প্রয়োজন। কারণ ঘুম আপনার সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে শরীরের শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমান সেটাও স্বাস্থ্যের কারণ হতে পারে আবার প্রয়োজনের অতিরুক্ত ঘুম ডেকে আনতে পারে আপনার জীবনে ডায়াবেটিসের মত জটিল রোগ এবং বন্ধ্যাত্বের মত মারাত্মক কিছু রোগ।

সেরেটোনিন হরমোনের সাহায্যে ঘুম নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ঘুমানোর ফলে সেরোটোনিনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এজন্য নিউরোট্রান্সমিটারকে বাধা দেয়, এজন্য সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠে অনেকে মাথার ব্যাথার কথা বলে থাকেন। এছাড়া অতিরিক্ত সময় ধরে ঘুমানোর কারণে হঠাৎ ক্ষুধা লাগা এবং অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগা , যার ফলে মাথাব্যাথা করতে পারে।

ডিপ্রেশনের কারণে অতিরিক্ত ঘুম হতে পারে। আপনার যদি স্লিপিং সাইকেল নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে উৎকণ্ঠা এবং আপনার মানসিকতা সৃষ্টি হতে পারে।

আপনি যদি বেশি ঘুমান তাহলে আপনার ক্লান্তি আসতে পারে। অতিরিক্ত ঘুমানোর ফলে কাজ-কর্মে ব্যাহত হয়ে থাকে। আপনি যদি অতিরিক্ত ঘুমান তাহলে আপনার পেশী এবং স্নায়ু শক্ত হয়ে যায়। ফলে শারীরিক চাপ নিতে সমস্যা হতে পারে।

অতিরিক্ত ঘুমানোর ফলে আপনার হরমোনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যে সকল হরমোন ইনসুলিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সেখানে প্রভাব পরতে পারে। অতিরিক্ত ঘুমানোর ফলে শরীরে ক্লান্তিবোধ দেখা দেয় শক্তি কমে যায় এজন্য মানুষ তখন জাঙ্ক ফুট বা উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে।

সকালে বেশি ঘুমালে কি হয়

গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা চার ধরনের মানুষকে বেছে নিয়েছেন এবং মতামত দিয়েছেন সকালে বেশি ঘুমালে কি হয় । যারা নিয়মিত প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেন, মাঝে মাঝে সকালে যারা ঘুম থেকে উঠেন, মাঝে মাঝে দেরি করে ঘুমান, এবং যারা প্রতিদিন বা প্রতিরাতে নিয়মিত রাত্রি জাগরণ করেন। এই চার ক্যাটাগরিতে থাকা ব্যক্তিদের বয়স ৩৮ থেকে ৭৩ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক ক্রোন বায়োলজি গবেষণা পত্রটি জার্নালে প্রকাশ করার পর জানা যায়। 

সেখানে দেখা যায় যে যারা নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে ওঠেন তাদের গড় আয়ু যারা রাত্রি জাগরণ করেন সে সকল ব্যাক্তিদের থেকে সাড়ে ছয় বছর বেশি। তবে এই বিষয়ের সাথে মানুষের বয়স, গোত্র, লিঙ্গ, ওজন ,খাদ্যাভাস, আত্মসামাজিক অবস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে জড়িত। এসব বিষয়গুলো সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে হিসাব করে দেখা যায় সকাল বেলা যারা ঘুম থেকে ওঠেন, তাদের মধ্যে অকালে মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম।

অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ

অতিরিক্ত ঘুমের কারণে অনেক রকম রোগ হতে পারে। অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ তা আমরা এখন জানব। অতিরিক্ত ঘুমানোর কারণে হাইপারসোমনিয়া রোগের কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে ।, হাইপারসোমোনিয়া হলো ডায়াবেটিস কিম্বা হৃদরোগের মত বেশ জটিল একটি রোগ বিজ্ঞানীরা বলেছেন। হাইপারসোমনিয়া বা ডাইবেটিস এই দুটি রোগ আপনাকে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
সুতরাং বলা যেতে পারে যারা অতিরিক্ত ঘুমে ভুগছেন তাদের এখনই সতর্ক হতে হবে। অতিরিক্ত প্যানিক না নিয়ে কিংবা ভয় না পেয়ে নিজেকে টেকনিক খাটিয়ে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। অতিরিক্ত ঘুমালে শরীরের যেসব ক্ষতি হয় এই বিষয়ে জেনে থাকা আমাদের একান্ত দরকার।

অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায়

আমরা জানি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দিনে ৯ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। কেউ যদি ৯ ঘন্টার বেশি ঘুমান তাহলে তাকে অতিরিক্ত ঘুম হিসেবে ধরা হয়। এই অতিরিক্ত ঘুমানো কে বিজ্ঞানীরা একটি রোগ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আর এই রোগের একটি নামও আছে তা হল হাইপারসোমোনিয়া। যারা দিনে ঘুমাতে ভালোবাসেন একদিন নির্দিষ্ট সময় পার করার পরেও আরও অতিরিক্ত ঘুমাতে চাই তাদের মধ্যে এই রোগটি আছে বলে ধারণা করা হয়। 

এই হাইপারসোমনিয়া সিমটমটি যাদের মধ্যে আছে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি লক্ষণ দেখা যায়। যেমন-প্রায় সময়ই তারা কোন কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে, তাদের শরীরের শক্তি কমে যায়, তাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে, এগুলো নিদ্রাহীনতার কারণ। তাই আমরা এগুলো থেকে বের হয়ে আসার উপায় খুঁজি। ঘুম কমানোর কয়েকটি উপায় জেনে নিন চলুন-

আপনি কখন ঘুম থেকে উঠবেন তার উপর ভিত্তি করে এক থেকে দুইটি এলার্ম দিয়ে রাখতে হবে। আপনাকে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করতে হবে।

আপনি যে মোবাইলে বা ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখেন। সেই মোবাইল বা ঘড়ি হাতের কাছ থেকে একটু দূরে রাখুন যাতে আপনাকে বন্ধ করার জন্য বিছানা থেকে উঠতেই হয়। ঘড়িতে যখনই এলাম বাছবে তখনই আপনি ঘুম থেকে উঠে পড়ুন। পাঁচ মিনিট বেশি ঘুমানোর জন্য আপনার এক ঘন্টা দেরি হয়ে যেতে পারে।

আমরা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করতে চাই না। কিন্তু এখানে বলা চলে সকালে ঘুম থেকে উঠে ৩০ মিনিটের মধ্যে নাস্তা করে নিলে সারাদিন আপনি কাজে বাড়তি শক্তি পাবেন। এক থেকে দুই ঘন্টার ব্যবধানে প্রতিদিন আপনি নিয়মিত শুয়ে পড়ার চেষ্টা করুন।

আমরা যারা কর্মজীবী তারা সাপ্তাহিক একদিন ছুটি পেয়ে থাকি। এই ছুটির দিনে একটু অতিরিক্ত ঘুমিয়ে থাকি। এই ঘুম থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। এই ঘুম আপনার নিয়মিত ঘুমের ধারায় ব্যাঘাত দিতে পারে। ব্যায়াম করুন ,স্বাস্থ্যকর খাবার খান এগুলো নিয়মিত করার ফলে আপনার শরীর ও মন ভালো থাকবে।

কম ঘুমালে কি হয়

অতিরিক্ত ঘুমালে যেমন শরীরের ক্ষতি হয় আবার কম ঘুমালেও শরীরের ক্ষতি হয়। কম ঘুমালে কি হয় এখন আমরা আলোচনার মাধ্যমে জানতে পারব। আপনি যদি ছয় ঘন্টার কম সময় ঘুমান তাহলে শরীরের একাধিক ক্ষতি হতে পারে। এভাবে যদি এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলতে থাকে তাহলে একসময় তা আপনার আয়ুর উপর প্রভাব পড়বে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে দীর্ঘদিন ধরে কম সময় বা ছয় ঘন্টার কম ঘুমালে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি এবং কোলেস্টরেল বৃদ্ধি হওয়ার মতো রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়।

অতিরিক্ত ঘুম কেন হয়

আপনার যদি সারাক্ষণ ঘুম পেয়ে থাকে এই লক্ষণকে বলা হয় হাইপারসোমনিয়া। এই লক্ষণ যাদের মধ্যে আছে তারা রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর পরেও দিনে অতিরিক্ত ঘুমানোর চেষ্টা করেন। এই ঘুমের কারণে আপনার দৈনন্দিন জীবন ও কর্মক্ষেত্রের ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ঘুম কেন হয় তার কারণ মাদকদ্রব্য সেবন ,মদ্যপান, মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতার কারণে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

লেখকের মন্তব্য

আমরা আজকে এই আর্টিকেলে আলোচনা করলাম অতিরিক্ত ঘুমালে শরীরের যেসব ক্ষতি হয় সে বিষয় নিয়ে। অতিরিক্ত ঘুম যেমন শরীরের ক্ষতি হয় আবার কম ঘুমও শরীরের ক্ষতি হয়। তাই আমাদেরকে স্বাভাবিক মাত্রায় ঘুমানো উচিত। আমাদেরকে দিনে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে এর বেশি ঘুমানো যাবে না। এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে আপনার প্রিয়জনদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন।





এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url