কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জানুন
আসসালামু আলাইকুম। আজকের আর্টিকেলে কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এই বিষয়টি
নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলবো। প্রিয় পাঠক বৃন্ধুরা আমি আশা করছি আপনারা সবাই অনেক
ভাল আছেন। আপনাদের সবাইকে আমার এই ওয়েবসাই আপনাকে জানাই স্বাগতম। চলুন আর দেরি না
করে আলোচনা শুরূ করা যাক ।
আর্টিকেলের শুরুর প্রথমে আমরা কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে কথা বলব। আবার
পরে আরো কথা বলবো কিডনি রোগ কিভাবে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে এই রোগ সারানো যায়
তা জানানোর চেষ্টা করব।
পোস্ট সূচিপত্রঃ কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জানুন
ভূমিকাঃ কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জানুন
প্রথমে আপনাদের মাঝে কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করব ।
সাধারণত ডাক্তাররা প্রথমে কিডনি রোগ সিলেক্ট করার জন্য রোগীর রক্তের
ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে , রক্তের ইউরিয়া পরীক্ষা করে, এবং ইলেকট্রোলাইটসহ বিভিন্ন রকম পরীক্ষা করে
রোগ সনাক্ত করে । যদি আপনার শরীরে পানি শূন্যতা, ডায়রিয়া এবং বমির জন্য একিউট কিডনি রোগ দেখা
দেয় সেক্ষেত্রে পটাশিয়াম বা খাবার স্যালাইন দিয়ে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা শুরু করা হয়।
কিডনি রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার
মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হচ্ছে কিডনি যাকে আমরা বাংলায় বলি বৃক্ক। কিডনির কাজ হচ্ছে রক্তের ভিতরে যে দূষিত পদার্থ গুলো উপস্থিত থাকে সেই দূষিত
পদার্থগুলো পরিশোধন করা এবং অবশিষ্ট কিছু অংশ মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে
দেওয়া। বিশেষ করে কিডনিতে যখন কোন সমস্যা হয় বা সমস্যার কারণে কিডনির
কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন তাকে আমরা কিডনি রোগ বলি। আপনার মধ্যে কোন উপসর্গ
ছাড়াই কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে।
অসুস্থ বা অকার্যকর কিডনির কারণে দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক জটিলতায় একজন মানুষ
আক্রান্ত হয়ে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তাই আমাদের অন্যান্য
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ রাখার পাশাপাশি কিডনিটা সুস্থ রাখা জরুরি। বিশেষ করে কিডনি
রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। তাই চলুন জেনে নেই
কিডনি রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার।
কিডনি রোগের লক্ষণ-
- সমস্ত শরীর ফুলে যায়, ফোলাটা মুখমন্ডল থেকে যদি শুরু হয়ে থাকে।
- আপনার স্বাভাবিক প্রস্রাবের তুলনায় প্রস্রাবের পরিমাণ অনেক কমে গেলে।
- আপনার লাল রঙ্গের প্রস্রাব হতে পারে বা প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া।
- ব্যাথা হবে কোমরের দুই পাশে। তলপেট থেকে শুরু হবে এই ব্যাথা।
- উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেওয়ার ফলে।
এছাড়াও মানুষের শরীরে কিছু রোগ আছে যা থাকলে অবশ্যই তাদেরকে পরীক্ষা করতে হবে।
যেমন-যদি কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকে, কারো ডায়াবেটিস হয়ে থাকে, যদি কারো ওজন
স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে বেশি থাকে, কখনো যদি মুখমন্ডল ফুলে থাকে। আবার এমন কোন
মানুষ যদি থাকে যার হাটা চলার অভ্যাস নাই বসে বসে কাজ করেন ।
আবার কোন কারনে আপনাকে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাথানাষক ঔষধ খেতে হয়েছে, এবংআপনি যদি পানি পান কম করে থাকেন , আপনার বংশে যদি কিডনি রোগ থেকে থাকে তাহলে এই ধরনের মানুষের
অন্তত বছরে দুইবার কিডনি পরীক্ষা করা উচিত।
কিডনি রোগের প্রতিকার-
যাদের ডায়বেটিসের মতো রোগ , উচ্চ রক্তচাপ, নেফ্রাইটিস এই তিনটি রোগ যাদের আছে
তাদের কিডনি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। আমাদের দেশের অধিকাংশ লোকের
শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের কিডনি এই তিন রোগের কারণে নষ্ট হয়ে থাকে। আমরা যদি এই
তিনটি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি তাহলে কিডনি রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারি। যাদের
কিডনিতে ইনফেকশন আছে এবং কিডনিতে পাথর আছে বা যাদের কিডনিতে বাধাগস্ত রোগ আছে
তাদের অবশ্যই চিকিৎসার করার মাধ্যমে রোগ সারিয়ে তুলা সম্ভব হবে।
আরো কিছু সতর্কতার মাধ্যমে কিডনি ফেইলর থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
যেমন-ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে,
চর্বি কমাতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, ধূমপান পরিহার করে চলুন, পরিমাণ মতো
পানি পান করতে হবে , অতিরিক্ত পেইনকিলার বা ঔষধ না খাওয়া , পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ
জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকা।
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের লক্ষণ
কিডনি জনিত সমস্যায় যারা ভোগের তাদের মধ্যে কিডনি রোগের লক্ষণ লক্ষ্য করা যায়।
প্রস্রাব করার সময় অতিরিক্ত জ্বালাপোড়া করা, প্রস্রাব লাল বর্ণের হওয়া, ঘন ঘন
প্রস্রাব করা, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া, কোমরের দুই পাশে ব্যাথা করবে, তলপেটে
প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হবে, মুখমন্ডল থেকে শুরু করে সমস্ত শরীর ফোলা ইত্যাদি লক্ষণ
কিডনি রোগের সংকেত বহন করে থাকে।
এই লক্ষণ গুলোর কারণে আপনি যদি মাস বা বছর ধরে চিকিৎসা করে থাকেন কিন্তু
দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার করার পরও আপনার কিডনি রোগ ভালো না হলে আস্তে আস্তে কিডনির কার্যক্ষমতা
কমতে থাকলে আমরা এই সমস্যাকে দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ বলে থাকি।
কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার
আপনার স্বাস্থ্য প্রতিফলিত হবে আপনি যা খাবেন তাই দিয়ে। এবং আর যেকোনো অঙ্গকে
ঠিক রাখার জন্য যেসব খাবার খেতে হয় ঠিক তেমনই কিডনির সুরক্ষার জন্য বিশেষ কিছু
খাবার দরকার হয়। যেমন একটি স্বাস্থ্যবান হৃদপিণ্ড থাকা দরকার পাশাপাশি একটি
স্বাস্থ্যবান কিডনিও থাকা দরকার। রক্ত থেকে বজ্র বের করে দেওয়াটা হলো কিডনির
প্রধান কাজ।
দেহ থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়ার মাধ্যমে ক্ষতিকর টক্সিন বা বিষ অপসারণ
করে ফেলে। তাছাড়া কিডনি ইলেকট্রোলাইটস সকল তরলের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। এমন
একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে ভালো রাখার জন্য উপকারী খাদ্যাভাস অত্যন্ত জরুরী। এখন
আমরা জেনে নিব কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার সম্পর্কে।
যেমন-নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খান , ক্যানবেরি জুস খান , কিডনি পরিষ্কার
রাখার জন্য হলুদ খাওয়া দরকার, এর পাশাপাশি আপেল, রসুন, ড্যান্ডেলিয়ন , অলিভ
অয়েল, লেবুর শরবত, আদা এই খাবারগুলো খাওয়ার মাধ্যমে কিডনি পরিষ্কার রাখা সম্ভব।
কিডনির ব্যাথার লক্ষণ
কিডনি রোগের উপসর্গ বোঝা যাবে ব্যাথার মাধ্যমে। এই ব্যাথা সাধারনত পেছনের দিকে
পাঁজরের নিচের অংশে হওয়ার কথা। এই ব্যাথা বিভিন্ন দিকে নড়াচড়া করে কোমরের দুই
পাশে যেতে পারে। এই ব্যাথা সাধারণত থেমে থেমে হয়ে থাকে এজন্য শোয়া-বসা বা কোন
কিছুতেই শান্তি মেলে না। কিডনি রোগের মূল উপসর্গ ব্যাথা নয়, এই রোগের কারণে
শরীরে পানির জমতে পারে, দুর্বলতা আসতে পারে, খোদা মন্দা হতে পারে, এবং বমি বমি
ভাব দেখা দিতে পারে। এই আলোচনাতে কিডনির ব্যাথার লক্ষণ সম্পর্কে জানতে পারলাম।
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় হিসেবে কিডনি ভালো আছে কিনা কিডনির ক্ষমতা বুঝতে
রক্তের সিরাম ক্রিয়েটিনিন এবং রক্তের ইউরিয়া পরীক্ষা করে দেখতে হয়। তবে কিডনি
কতটুক ভালো আছে বা কতখানি আক্রান্ত তা বোঝার জন্য সবচেয়ে ভালো হয়
জিএফ (গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশন রেট ) আর সিসিআর ( ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেস্ন রেট ) টেস্ট
করাতে হয়। টেস্টের রেজাল্ট যদি জিএফ আর ৯০% এর উপর হলে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে
পারেন।
লেখকের মন্তব্য
পরিশেষে আমরা বলতে পারি কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং কিডনি রোগের ঘরোয়া টুটকা সম্পর্কে
আমাদের জেনে থাকা একান্ত জরুরি। তাই এই পোস্টে কিডনি রোগ সম্পর্কে আমি বিষদ ভাবে আলোচনা করেছি। যদি এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তার প্রয়োজন
মনে করেন। তাহলে আপনার প্রিয় মানুষদের কাছে শেয়ার করে নিতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url